করোনার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়য়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
নোটিশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য সেবা) সচিব ছাড়াও, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। অন্যথায় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
জনস্বার্থে মঙ্গলবার (৯ জুন) সকালে ই-মেইলে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন)। নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী নিজে।
Advertisement
১২ এপ্রিল বরিশাল ও খুলনা বিভাগের জেলাসমূহের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ রোগে ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক ও চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো জীবাণুমুক্ত রাখা এবং এগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেবে। যেন এগুলো থেকে করোনাভাইরাস আর না ছড়ায়।’
তাই নোটিশে বলা হয়, বর্তমানে করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশীয় বিশেষজ্ঞদের মতে এ ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং এক জনগোষ্ঠী থেকে অন্য জনগোষ্ঠীতে সংক্রমিত হয়। অধিকন্তু করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি থেকেও এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়। কিন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি (পিপিই), হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে যত্রতত্র ফেলায় দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।
‘করোনা সংক্রমণের পর থেকে দেশে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ১ হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস বর্জ্য ও ৪৪৭ টন সার্জিক্যাল মাস্কের বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এ ধরনের বর্জ্যের সঠিক ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকার ফলে পরিবেশের ক্ষতিসাধন ও পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ দেশের জনগণ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা বিদ্যমান রয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর বেশ কিছু প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সে কারণেই সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই বিষয়ে ইতোপূর্বে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ নোটিশ প্রেরণ করা হলো।’
আইনজীবী বলেন, নোটিশ পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশাল সংখ্যক ব্যবহৃত ওয়ান-টাইম মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গ্লাভস, মাস্ক ও হেডক্যাপের মতো সুরক্ষা সামগ্রীগুলো ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হচ্ছে যত্রতত্র। যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া ফেলে দেয়া এই মেডিকেল বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। বর্তমানে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের উল্লেখযোগ্য অংশই বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রীগুলো সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আবার হাতে গোনা কিছু হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলো নিয়ম মেনে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমরা যদি সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে এই মেডিকেল বর্জ্য মিশিয়ে ফেলি তাহলে বিপদ আরও বাড়বে। আর এ থেকে নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) তথ্যমতে, কেবল রাজধানী ঢাকা থেকেই গত মাসে প্রায় ২৫০ টন মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আর দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন। এই সময়ে ঢাকায় ১ হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস এবং সার্জিক্যাল মাস্কের ৪৪৭ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এসব বর্জ্যের বড় একটি অংশ যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। এতে করে ভয়াবহভাবে করোনার গণসংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। মিরপুরের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জানান, বেশিরভাগ বাসার ময়লা নিতে গিয়ে তারা ময়লার সঙ্গে রাবার বা প্লাস্টিকের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক পাচ্ছেন। এমনকি রাস্তাঘাটেও এখন অসংখ্য মাস্ক ও গ্লাভস পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির এই সময়ে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস যত্রতত্র ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত বর্জ্যগুলো অটোক্লেভস মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেইফটিক্যাল ব্যাগে ভরে রাখা। পরে এসব বর্জ্য উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ফেলা।
এফএইচ/এমএফ/পিআর