গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সেই থেকে শুরু, আজ ৮ জুন। অর্থাৎ করোনা মহামারির তিন মাস অতিক্রম করল দেশ।
Advertisement
শুরুর দিকে করানোভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন হলেও বর্তমানে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত তিন মাসে রাজধানীসহ সারাদেশের ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস শনাক্তে সর্বমোট চার লাখ ১০ হাজার ৯৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। মোট আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৬৮ হাজার ৫০৪ জন। আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯৪০ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ হাজার ৫৬০ জন।
সোমবার (৮ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক সর্বশেষ হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা। যা দ্বিতীয় দিনের মতো সর্বোচ্চ। আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭৩৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত সাতদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ ৯০ হাজার ৯৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ হাজার ৭৯০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
Advertisement
গত তিন মাসে মোট মৃত্যুর (৯৩০) ২৮ শতাংশই (২৫৮) সংঘটিত হয় গত সাতদিনে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে! সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিনজোনে ভাগ করে লকডাউনের আওতায় আনার চেষ্টা শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে জোনভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে জোনভিত্তিক লকডাউনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। সেখানে দেশের ৫০ জেলা পুরোপুরি লকডাউন, ১৩ জেলা আংশিক লকডাউন হিসেবে দেখানো হয়। এছাড়া রাজধানী ঢাকার ৩৮ এলাকা আংশিক, লকডাউন নয় এমন ১১টি এলাকা এবং সম্পূর্ণ লকডাউন ‘শূন্য’ এলাকা দেখানো হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শীর্ষঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা তথা ঢাকা বিভাগ। এর পরের অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগের। এ দুটি বিভাগেই সংক্রমণ ও মৃত্যু সর্বাধিক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সর্বমোট মৃত্যু ৯৩০ জনের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২৭৮ জন, ঢাকা বিভাগে ২৭০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ২৪ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ জন, বরিশাল বিভাগ ২২ জন এবংসিলেট বিভাগে রয়েছেন ৩৫ জন রয়েছেন। মৃত্যুর তালিকায় পঞ্চাশোর্ধ রোগীর সংখ্যাই বেশি।
জেলাওয়ারি আক্রান্তের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৭১৭ জন ঢাকা জেলায় আক্রান্ত। এছাড়া আক্রান্ত বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রামে রয়েছেন ৪ হাজার ৭১ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ৫৯৪ জন, গাজীপুরে ১ হাজার ৭০৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ হাজার ৩৫ জন, কুমিল্লায় ১ হাজার ৪৩০ জন এবং কক্সবাজারে ১ হাজার ৪ জন রয়েছেন।
Advertisement
রাজধানী ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে- মিরপুরে ৬৮৪ জন, মহাখালীতে ৪৭১ জন, উত্তরায় ৪৫৬ জন, মুগদায় ৪৩৪ জন, মোহাম্মদপুরে ৪২৫ জন, যাত্রাবাড়ীতে ৩৯৮ জন, ধানমন্ডিতে ৩১৭ জন, কাকরাইলে ৩০০ জন, তেজগাঁওয়ে ২৬৭ জন, মগবাজারে ২৬৩ জন, রাজারবাগে ২২২ জন এবং গুলশানে ১৭৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরে অবস্থান করা, জীবন-জীবিকার তাগিদে বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা, কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সেনিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধৌত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৯০ ভাগ সাধারণ ওষুধপত্রে সুস্থ হয়ে যান। শতকরা ৫ থেকে ১০ শতাংশের অক্সিজেনসহ আইসিও সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে করোনারোগীদের জন্য ঘোষিত হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা মাত্র ৩৯৯টি। কিডনি ডায়ালাইসিস বেড আছে মাত্র ২০৬টি।
বর্তমানে সারাদেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে সকলেই শঙ্কিত। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সবাই গুরুত্বারোপ করছেন। তবে জীবন ও জীবিকার তাগিদে হাজার হাজার মানুষের ঘরের বাইরে বের হয়ে আসা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এমইউ/এমএআর/এমএস