দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ৭৩৫ জনের দেহে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ফলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬৮ হাজার ৫০৪ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৪২ জন। ফলে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৩০ জনে।
Advertisement
সোমবার (৮ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৯৬১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৯৪৪টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ১০ হাজার ৯৩১টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৭৩৫ জনের মধ্যে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৮ হাজার ৫০৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪২ জন। আগেরদিনও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ৯৩০ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৫৭ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৪ হাজার ৫৬০ জন।
নতুন করে যারা মারা গেছে তাদের ৩৩ জন পুরুষ এবং নয়জন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আটজন, সিলেট বিভাগে একজন, খুলনা বিভাগে দুজন, রাজশাহী বিভাগে একজন, বরিশাল দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন ও রংপুর বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বয়সের দিক থেকে ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের তিনজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব সাতজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১০ জন, ষাটোর্ধ্ব ১২ জন, সত্তরোর্ধ্ব চারজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের দুজন এবং ৯১ বছরের বেশি বয়সী দুজন মারা গেছেন।
Advertisement
গত রোববারের (৭ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ১৩ হাজার ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৭৪৩ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও মৃত্যু হয়েছে সমানসংখ্যক। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে দুই হাজার ৯১১ জনের, যা গত ২ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়।
সোমবারের বুলেটিনে বলা হয়, দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ২৯৭ জনকে। এ পর্যন্ত আসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১১ হাজার ৮৭১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৪৪ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন চার হাজার ৩১৯জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন সাত হাজার ৫৫২ জন।
দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০৬টি।
Advertisement
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২২৮ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ তিন হাজার ৪২৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৮৫২ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৩ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৭ হাজার ৭২ জন।
দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতোই ডা. নাসিমা বলেন, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে।
করোনাভাইরাসের ছোবলে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ছয় হাজারেরও বেশি। তবে প্রায় পৌনে ৩৫ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস।
পিডি/এমইউ/এইচএ/জেআইএম