টাঙ্গাইলে বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে কৃষকের স্বপ্নের বোরো ধান। কেটে ঘরে উঠাতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। একদিকে করোনাভাইরাসের থাবা, অপরদিকে প্রায় প্রতিদিনের বৃষ্টিতে বোরো ধানের জমি ডুবে গেছে। ফলে ১ মণ ধানের দামেও ১ জন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্য, আত্মীয় এবং বেশি মজুরিতে ২-৪ জন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন। এরপর ধান ক্ষেতে পানি থাকায় অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক কাজও করতে পারছেন না। তবে বৃষ্টির পানিতে ধানের ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানে না স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
Advertisement
জানা যায়, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৭১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন। সেখানে জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর। এরমধ্যে টাঙ্গাইল সদরে ১৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর, বাসাইলে ১১ হাজার ১২০ হেক্টর, কালিহাতীতে ১৮ হাজার ২৫২ হেক্টর, ঘাটাইলে ২০ হাজার ৯৭৪ হেক্টর, নাগরপুরে ১৬ হাজার ৬৮ হেক্টর, মির্জাপুরে ২০ হাজার ৮১০ হেক্টর, মধুপুরে ১২ হাজার ৪২০ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর, গোপালপুরে ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টর, সখীপুরে ১৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ৯ হাজার ৬২০ হেক্টর, ধনবাড়ীতে ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার কাগমারা, এনায়েতপুর, বাইমাইল, ধরেরবাড়ী, কোনাবাড়ী, লাউজানা, বানিবাড়ী, পিচুরিয়া, গালা, কুইজবাড়ী ও বড় বাসালিয়া এলাকায় দেখা যায়, হাঁটু থেকে প্রায় কোমর পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে ধান ক্ষেত ডুবে আছে। পানিতে দাঁড়িয়ে কৃষক ও শ্রমিকরা ধান কাটছেন। কাটা শেষে ধানের আটি পানি থেকে রশি দিয়ে টেনে টেনে বাড়ি নিচ্ছেন। কেউ আবার ধান ক্ষেতের পাশেই পানির মধ্যে খড় বিছিয়ে নেট অথবা প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে মাড়াই করছেন। পানি থাকার কারণে আগের নির্ধারিত জায়গায় কৃষকরা ধান শুকাতে পারছেন না। শুকনো জায়গায় নিয়ে ধান শুকাতে হচ্ছে। এরপরও ক্ষেতে পানি থাকার কারণে শ্রমিক, সময় এবং মজুরি বেশি লাগছে। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
কাগমারা এলাকার রূপচান মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই এবং শুকানো পর্যন্ত সময়ও লাগছে বেশি। বৃষ্টির কারণে পাশের বাইমাইল এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে ধান শুকাচ্ছি। সব মিলে খরচও কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে।’
Advertisement
একই এলাকার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। এরমধ্যে দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি। বাকি দুই বিঘা জমির ধান বৃষ্টির কারণে পানিতে ডুবে গেছে। ধান কাটতে শ্রমিকও বেশি লাগছে। আমার স্কীমে প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। সেখান থেকে আংশিক ধান কৃষক কাটতে পেরেছেন। বেশিরভাগই পানিতে ডুবে গেছে।’
কৃষক মো. মামুন মিয়া বলেন, ‘টাকা ধার করে ধান চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম ধান বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবো। এখন পানিতে তলিয়ে গেছে ধান ক্ষেত। খরচের তুলনায় ধানের দাম খুবই কম। পাকা ধান ঘরে তোলা আর দেনা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
কৃষক আলীম মিয়া বলেন, ‘ধান কাটতে ৭৫০-৮৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে শ্রমিককে। এরমধ্যে আবার তিন বেলা খাবার দিতে হয়। সব মিলে ধান চাষ করে এ বছর খরচের টাকাও উঠবে না। ভাবছি আগামিতে আর ধান চাষ করবো না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে কী পরিমাণ ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে, আর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে; তার হিসাব দিতে পারছি না।’
Advertisement
আরিফ উর রহমান টগর/এসইউ/এমকেএইচ