ভারতের পশ্চিম মহারাষ্ট্র থেকে মধ্য প্রদেশের বেতুল জেলায় আসতে ৫০০ কিলোমিটারেরও (৩১০ মাইল) বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে বাঘটি। এ দীর্ঘ পথযাত্রায় কত গবাদিপশু সাবাড় করেছে তার ঠিক নেয়। পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মধ্য প্রদেশে আটক করা হয় বাঘটিকে। দুই মাস আটক থাকার পর ট্র্যাকিং কলার নিয়ে এতদিন একটি বাঘ সংরক্ষণাগার ও একটি জাতীয় পার্কের মধ্যে মুক্ত আনাগোনা ছিল তার।
Advertisement
তবে অভিযোগে উঠেছে, বাঘটি এ সময়ে তিনজন মানুষের প্রাণ নিয়েছে। তাই বাঘটিকে আর মুক্ত বিচরণের সুযোগ দিতে চায় না মধ্য প্রদেশ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের নতুন সিদ্ধান্ত বাকি জীবনটা তার একটি চিড়িয়াখানায় কাটিতে দিতে হবে।
বাঘটিকে এখন মুক্ত অবস্থায় রাখা মোটেও নিরাপদ নয় মনে করছেন সরকারের কর্মকর্তারা। মধ্য প্রদেশের বন্যপ্রাণীর প্রধান তত্ত্বাবধায়ক এস কে মণ্ডল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘পুনরায় বন্যজীবনে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য আমরা বাঘটিকে অনেক সুযোগ দিয়েছি কিন্তু মানুষের ওপর আক্রমণের অভ্যাস রয়েই গেছে। তাই বাঘটিকে এবং মানুষ-উভয়কে নিরাপদ রাখতে বাঘটিকে বন্দিদশায় রাখা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অপশন আমাদের হাতে নেই।’
স্থানীয় গণমাধ্যম বাঘটির নাম দিয়েছে ‘ভগবান’ বা ‘নোমাদ’। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘটির স্বভাব মোটেও বদলায়নি। সে প্রায়ই নিকটস্থ মানব আস্তানা ও গবাদিপশুর ওপর হানা দিচ্ছে। এতে মানবজীবন হুমকির সম্মুখীন। সর্বশেষ বাঘটিকে শান্ত করে শনিবার মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপালের একটি চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
Advertisement
কর্মকর্তারা বলেছেন, বাঘটিকে বন্দিদশায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েক মাস আগে। তবে নভেল করোনাভাইরাসজনিত কারণে লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে দেরি হয়ে গেছে।
ভোপালের ভ্যান বিহার ন্যাশনাল পার্কের পরিচালক কমলিকা মহন্ত এএফপিকে বলেন, ‘নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে বাঘটির বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এ সময় তার আচরণগত বিষয় পর্যবেক্ষণ করব আমরা। তবে আপাতত তাকে সম্পূর্ণ একাই থাকতে হবে। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে, তাকে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হবে নাকি কোনো একটি সাফারি পার্কে পাঠিয়ে দেয়া হবে সে বিষয়ে।’
ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশটিতে বাঘের আক্রমণে প্রাণ গেছে অন্তত ২২৫ জনের। অপরদিকে ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুইশোর অধিক বাঘ শিকার করেছে শিকারিরা।
বিশ্বের ৭০ শতাংশ বাঘের বিচরণ ভারতে। গতবছর ভারত সরকার জানায়, ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৬৭টিতে। যেখানে ২০০৬ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪১১টি।
Advertisement
এসআর/জেআইএম