‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই তাৎপর্যপূর্ণ উক্তির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এবং ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনে দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই সারাদেশে আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়। এবারও দেশব্যাপী বইছে নির্মল সম্প্রীতি থেকে উৎসারিত উৎসবের ফল্গুধারা। সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালনের মধ্যদিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হবে এমনটি প্রত্যাশা করছেন সচেতন সমাজবাসী। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক ও শুভ শক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটবে। সামাজিক সহিষ্ণুতা ও উদারতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারি এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।অসুরের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গা। বিজয় ঘটে শুভ শক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য এবং মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। এজন্য দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রদায়গত বিভেদের উর্ধে উঠে মানুষকে এক পরম আনন্দের মহীসোপানে দাঁড় করাচ্ছে। পুজোমণ্ডপগুলোয় তাই সকলেরই সমাগম ঘটে। শারদীয় দুর্গোৎসব সবার জন্য থাকে উন্মুক্ত। দেবীদুর্গার আগমনী আনন্দকে সকলেই ভাগাভাগি করে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কারণ বাঙালি জাতি নিরন্তর উন্মুক্ত উৎসবমুখর পথে চলতে পছন্দ করে। এই পছন্দের স্রোতধারায় এ ক`দিন ভিন্ন আমেজ ও ভিন্নতর সুবাতাস বয়ে গেল দেশজুড়ে। প্রতিটি ধর্মই মানুষে মানুষে প্রীতি প্রেম সহিষ্ণুতা ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায়। তারপরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক অবস্থানকে, ধ্বংস করে দেয় দীর্ঘকালীন হৃদ্যতাকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য বিভেদ হিংসা অন্যায় ও অকল্যাণের। আর এ জন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবীদুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তিকে সংস্থাপন করার জন্য এবং তা প্রত্যেক বছরেই। তিনি ন্যায়ের উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে যান সকলকে। সবাই মা দুর্গার এই ডাকের অপেক্ষায় থাকেন ব্যাকুল হয়ে।যথাযথ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সৌহার্দময় পরিবেশে দুর্গোৎসব পালিত হওয়ার প্রত্যাশা সব সময়ের। উৎসবে আনন্দে মুখরিত ছিল এবারের সকল মন্দির প্রাঙ্গণ। ভক্তিমূলক গান, চণ্ডী পাঠে এক ধরনের পবিত্র আবেশ লক্ষ্য করা গেছে। প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। প্রশাসনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় পুজো উৎসব নির্বিঘ্নে পবিত্রতার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। শারদীয় দুর্গোৎসবে শুভ বিজয়া দশমীর এইদিনে সকলের কাম্য বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন থাকুক, দূর হয়ে যাক সকল সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদ। কারণ এ দেশের ঐতিহ্যই যে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি রক্ষার। আর সব ধর্মের মূল বাণীও হচ্ছে মানবতার উন্মেষ ঘটানো। এইচআর/পিআর
Advertisement