দেশজুড়ে

মৃত্যুর ৮ দিন পর জানা গেল সাহাব উদ্দিন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আলোচিত সাহাব উদ্দিন উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার আটদিন পর জানা গেল তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোববার (৭ জুন) সকালে সাহাব উদ্দিনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

Advertisement

এর আগে গত রোববার (৩১) মে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের অমানবিক আচরণে তার মৃত্যুর অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার ভাদাদিয়া গ্রামের সাহাব উদ্দিন চট্টগ্রামের একটি পেট্রল পাম্পে কাজ করতেন। ৩০ মে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তিনি গ্রামের বাড়ি সোনাগাজীতে চলে আসেন। ৩১ মে অবস্থার অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে নিজেই করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে যান। রাতে নিজ বাড়ির একটি কক্ষে তার মৃত্যু হয়

স্থানীয়রা জানায়, সাহাব উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার নমুনা দেয়ার পর তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে তার কক্ষের বাইরে ছিটকিনি দিয়ে দ্বিতীয় তলায় চলে যান। বিকেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার ও পানি চাইলেও কেউ দেননি। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকেও বোনেরা বাধা দেয়। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

Advertisement

পরে সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি মারা গেছেন। এ সময় ছোট ছেলে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। অমানবিকতার মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে। ঘটনার সময় তার দুই ছেলে কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে ছিলেন।

এদিকে ফেনীতে নতুন করে আরও ১৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ২৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এছাড়াও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া তিন ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিলো বলে পরীক্ষাগার থেকে জানানো হয়েছে।

রোববার সকালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দাগনভূঞার আটজন, সোনাগাজীর সাতজন ও পরশুরামের একজন রোগী রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ ও চারজন নারী। যাদের বয়স ১১ থেকে ৭৩ বছর। শনিবার (৬ জুন) ফেনী থেকে আরও ১৪৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ২৬৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৬৮ জন। আর করেনায় মারা গেছেন সাতজন।

জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সমন্বয়ক ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, শনিবার পর্যন্ত জেলায় ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজে পাঠা হয়। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯৩৫ জনের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।

Advertisement

রাশেদুল হাসান/আরএআর/পিআর