ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের মধ্যে রোববার ২৭টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমার সুযোগ নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্ধারণ করে দেয়া ফ্লোর প্রাইসের (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) কারণে এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম কমতে পারবে না। তবে দাম বাড়তে পারবে।
Advertisement
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর ৩১ মে থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর শুরু হওয়া লেনদেনের প্রথম দিন মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়। তবে পরের চার কার্যদিবসেই দরপতন হয়।
এ পতনের বাজারে প্রায় সবকটি ব্যাংকের শেয়ার দাম কমেছে। এতে ২৭টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে নেমে এসেছে। শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা তিনটি ব্যাংকের শেয়ার দামও খুব একটা কমার সুযোগ নেই।
দাম কমার সুযোগ থাকা তিন ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ১০ পয়সা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৬০ পয়সা এবং এনসিসি ব্যাংকের ২০ পয়সা পর্যন্ত কমতে পারবে।
Advertisement
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা আক্রান্ত রোগী দেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওইদিন বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়।
এর প্রভাবে ৯ মার্চ শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনে রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর দফায় দফায় দরপতন হতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় একঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়।
এরপরও পতন ঠেকানো না গেলে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (দামের সর্বনিম্ন সীমা) নির্ধারণ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এর মাধ্যমে শেয়ার বাজারের পতন কিছুটা হলেও থামানো যায়।
এক পর্যায়ে করোনার প্রকোপ সামাল দিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজারের লেনদেন। এ বন্ধের মধ্যেই ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোনো ব্যাংকই ১৫ শতাংশের বেশি নগদ এবং নগদ ও বোনাস শেয়ার মিলিয়ে ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে ৩১ মে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলে একের পর এক ব্যাংকের শেয়ার দাম কমতে শুরু করে। প্রথমদিনের লেনদেনেই দাম কমে ১৬টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইস বা দাম কমার সর্বনিম্ন সীমায় এসে ঠেকে। পরের চার কার্যদিবসেও অব্যাহত থাকে ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন। যার ফলে ২৭টি ব্যাংকের শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে।
ফ্লোর প্রাইস দিয়ে ব্যাংকের শেয়ারের ভয়াবহ দরপতন ঠেকানো গেলেও প্রতিদিনই বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম অপরিবর্তিত থাকছে। সর্বনিম্ন দামেও বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার কিনতে চাচ্ছে না। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংকের শেয়ার দাম অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে।
ব্যাংকের শেয়ার দামের এমন দুরবস্থার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলোর অভ্যান্তরীণ অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক না। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। এটা ক্রমশই কমছে অনেক দিন ধরে। এতে ব্যাংকের ভবিষ্যৎ মুনাফা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার কিনতে এ মুহূর্তে আগ্রহী নয়। চাহিদা না থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে যে কোনো কিছুর দাম কমে। ব্যাংকের শেয়ারেও দাম কমেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়ার কারণেও ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমি আগেই বলেছি লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া উচিত হয়নি। কারণ এক এক ব্যাংকের এক এক রকম অবস্থা। সুতরাং সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ লভ্যাংশ কত হবে তা শর্ত দিয়ে নির্ধারণ করা যুক্তি সঙ্গত হতে পারে না। যাদের মুনাফার চিত্র ভালো তাদের লভ্যাংশ বিতরণ বন্ধ করা উচিত না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক লভ্যাংশের বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে তার কারণেই ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে। এমন নির্দেশনা আসার পর বিনিয়োগকারীরা কেন ব্যাংকের শেয়ার কিনবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা উঠিয়ে নিতে হবে। এটা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিরোধী। তাছাড়া ব্যাংকের স্বাস্থ্যও ভালো না। বিনিয়োগকারীরা কেউ ব্যাংকের শেয়ার কিনতে চাচ্ছে না।
এমএএস/এএইচ/পিআর