দেশজুড়ে

করোনার পর টর্নেডো নিয়ে গেছে সূর্য বেগমের সবকিছু

টর্নেডোর ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সামনে ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সূর্য বেগম। তার চোখে-মুখে কেবলই অনিশ্চয়তার ছাপ। সারা দিন পেটে কোনও খাবারও পড়েনি। সময় যত গড়াচ্ছে তার দুশ্চিন্তাও তত বাড়ছে। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে কোথায় এবং কীভাবে থাকবেন সে চিন্তায় বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

Advertisement

শনিবার (০৬ জুন) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ও বুড়িশ্বর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে সূর্য বেগমের ছোট্ট একচালা টিনের ঘরটি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

সূর্য বেগম বুড়িশ্বর ইউনিয়নের আশুরাইল গ্রামের শামীম মিয়ার স্ত্রী। এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মাস ধরে স্বামী শামীম মিয়া কর্মহীন হয়ে আছেন। সংসার চলছে ধারদেনা করে। এ অবস্থায় টর্নেডোর আঘাতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে সূর্য বেগমের পরিবার।

সূর্য বেগমের মতো এমন আরও অনেক পরিবার টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে এমনিতে মানবেতর দিন কাটছে নিম্নআয়ের এসব পরিবারের। এর মধ্যে টর্নেডোর আঘাত যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকাল সোয়া আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে হঠাৎ করে জেলার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কুচনি-বুড্ডা ও নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া এবং বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর ও আশুরাইল গ্রামে টর্নেডো আঘাত হানে। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই টর্নেডোতে গ্রামগুলোর অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি অনেক ঘরের চাল উড়ে যায়। সড়কের অনেক গাছপালা ও নদীতে থাকা বেশ কয়েকটি নৌকা ভেঙে যায়।

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে নাসিরনগর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে ঘুরে টর্নেডোর ভয়াবহ তাণ্ডব দেখা গেছে। সড়কে ভেঙে পড়ে আছে গাছপালা, আর গাছের আগায় ঝুলছে ঘরের চাল। ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর সময় কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর। কারও ঘরেই খাবার নেই। সবকিছুই উড়িয়ে নিয়ে গেছে টর্নেডো।

টর্নেডোর আঘাতের বর্ণনা দিয়ে সূর্য বেগম বলেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে আমি চুলায় ভাত বসিয়ে ছিলাম। ঘরে আমার বৃদ্ধ শ্বশুর বরজু মিয়া ও ছোট চার মেয়ে ছিল। আমার স্বামী কাজের সন্ধানে ঢাকায় গেছেন। হঠাৎ করে দেখি আকাশে আগুনের মতো কিছু একটা। আমি ভয় পেয়ে আমার কোলের শিশুকে ধরতে গেছি। সবাইকে নিয়ে ঘরে থেকে বের হওয়ারও কোনো সুযোগ পাইনি। এর মধ্যেই দেখি আমাদের ঘর উড়ছে। হাড়ি-পাতিল সবকিছু নিয়ে গেছে। আমার দুই মেয়ে ব্যথা পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে কিছুই খাইনি। খাবা-দাবার সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে গেছে। দুপুরেও রান্না হয়নি। টাকা-পয়সাও নেই যে নতুন করে ঘর তৈরি করব। স্বামীকে খবর দিয়েছি, তিনি ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন। আপাতত কয়েকদিন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকতে হবে।

Advertisement

একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আউশ মিয়া জানান, টর্নেডোতে তার দুটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘর দুটিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবেন, কী খাবেন সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার মনে। সরকারের কাছে তাদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আজিজুল সঞ্চয়/এএম/জেআইএম