দেশজুড়ে

ঢাকা থেকে পালিয়ে গার্মেন্টসকর্মীর মৃত্যু, ৬ ঘণ্টা পড়েছিল লাশ

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মিজানুর রহমান (৪২) নামে এক গার্মেন্টসকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এরপর তার মরদেহ দাফন করা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।

Advertisement

করোনা আতঙ্কে মরদেহের কাছে যায়নি কেউ। প্রতিবেশীরা বাড়ির পাশের পথ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও এগিয়ে আসেনি। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির আঙিনায় খাটিয়ায় ওপর রাখা ছিল মিজানুর রহমানের মরদেহ। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মরদেহ দাফন করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় শ্রীপুর গ্রামে। মিজানুর রহমান ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন।

স্থানীয়রা জানায়, ঢাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করতেন মিজানুর। সেখানে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন তিনি। ১ জুন বাড়িতে আসেন। বাড়িতে ফিরে নিজ ঘরে আত্মগোপনে ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য শুক্রবার বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলে নদীতে স্পিডবোটে তার মৃত্যু হয়।

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, জ্বর, কাশি ও গলাব্যথ্যা নিয়ে কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে মিজানুর রহমান বাড়িতে এসে আত্মগোপন করেন। এরপর গোপনে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। শুক্রবার সকাল থেকে তার অবস্থার অবনতি হয়। অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ধরাধরি করে স্পিডবোটে উঠিয়ে দেন। স্পিডবোট বরিশালে পৌঁছার আগেই তার মৃত্যু হয়। এরই মধ্যে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে মিজানুর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

Advertisement

চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ আরও বলেন, মরদেহ নিয়ে ফিরে আসলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মরদেহ রাখা হয়েছিল তার বাড়ির আঙিনায়। এজন্য প্রতিবেশীরা বাড়ির পাশের পথ দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়। শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাড়ির আঙিনায় পড়েছিল মিজানুরের মরদেহ। এ সময় ওই এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। এমনকি মিজানুরের পরিবারের সদস্যরাও মরদেহের কাছে আসেনি। পরে বিষয়টি ইউএনওকে জানাই।

হারুন অর রশিদ বলেন, খবর পেয়ে ইউএনও পিজুস চন্দ্র দে দাফনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যর একটি দলকে পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী দেয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে রাত ১টায় তাকে দাফন করা হয়। মিজানুর রহমাননের বাবা, শ্বশুর ও এক ছেলে ছাড়া পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের কেউ জানাজায় অংশ নেয়নি।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিজুস চন্দ্র দে বলেন, মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর মরদেহ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় না। তবে গ্রামের লোকজন এসব বোঝে না। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরাও মরদেহ থেকে দূরে ছিল। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি দলের সহায়তা মরদেহ দাফন করা হয়।

সাইফ আমীন/এএম/এমকেএইচ

Advertisement