রাজনীতি

শিবপুরে বিএনপির সম্মেলন : পকেট কমিটির আশঙ্কা!

বৃহস্পতিবার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন। তবে সম্মেলন তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে নয়। প্রার্থী নির্বাচিত হবে জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে। ফলে দল পুনঃগঠনের এই সম্মেলন অনেকটা পরিণত হয়েছে বিশেষ নেতার বলয় পুনঃগঠনের। এতে দলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা মূল্যায়িত না হবার আশঙ্কা প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূইয়ার নির্বাচনী এলাকা শিবপুর। মান্নান ভূইয়া এই আসন থেকে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। ২০০৭ সালের এক এগার পরবর্তী সময়ে দলের সংস্কারের প্রস্তাব করে মহাসচিব পদ এবং দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর থেকেই এক সময়ের দুর্গে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপি।মান্নান ভূইয়া মারা যাওয়ার পরও তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার এখন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আবুল হারিছ রিকাবদার কালা মিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। তবে তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মৃধা মান্নান ভূইয়ার আদর্শে থেকেই হয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সেই নির্বাচনে কালা মিয়া হয়েছিলেন চতুর্থ।মান্নান ভূইয়া পরবর্তী সময়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার শিবপুর উপজেলা বিএনপিকে নিজের পকেটবন্দি করে রেখেছেন। সেই কাজ করতে গিয়ে তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান খাঁনের মতো প্রবীণ রাজনীতিবিদদের কাটছাট করেছেন। সর্বশেষ গত বছর দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকা আবুল হারিছ রিকাবদার কালা মিয়া পুনরায় বিএনপিতে যোগদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে তাকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়। কিন্তু তবুও ফেরেনি প্রাণ, কেন্দ্রের ডাকা আন্দোলন-সংগ্রামে শিবপুর বিএনপির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায়নি।এরই মধ্যে আন্দোলন-সংগ্রামে তৃণমূলকে সক্রিয় করতে দল পুনঃগঠনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রতিটি ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার জন্য নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রের। এরই অংশ হিসেবে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু শিবপুরে বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিএনপির কমিটি নেই। অধিকাংশ ইউনিয়ন চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। পৌর বিএনপির কমিটিও ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করার গুঞ্জন বইছে। সেগুলোর সম্মেলন না করেই তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।শিবপুর উপজেলা মিলনায়তনে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন।নেতা-কর্মীরা জানান, সম্মেলনকে সামনে রেখে পুরনো পথেই হাঁটছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার। ইতোমধ্যে গত রোববার সকালে অনুষ্ঠিত উপজেলা বিএনপির সভায় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে লিখিতভাবে কমিটি গঠনের ক্ষমতা আদায় করে নিয়েছেন। ফলে বিএনপির নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে সম্ভাব্য একাধিক নাম থাকলেও প্রকাশ্যে আসছেন না কেউ।নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক আবুল হারিছ রিকাবদার কালা মিয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ছালেক রিকাবদার, যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি তোফাজ্জল হোসেন ও মাকসুদুর রহমান খাঁনের নাম আলোচিত হচ্ছে।এদের মধ্যে আবু ছালেক রিকাদবদার দীর্ঘদিন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ভিপি তোফাজ্জল উপজেলার যোশর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। আর মাকসুদুর রহমান খাঁন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খায়রুল কবির খোকনের নিকট আত্মীয়।সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান খাঁন জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে আমিও আগ্রহী। তবে সর্বশেষ সভায় সমাঝোতার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাই শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যাকে দায়িত্ব দেয় সেটাই মেনে নেব। তারপরও যেসব প্রার্থী কাউন্সিলরদের কাছে ছুটাছুটি করছে তারা ভুল করছেন।উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি তোফাজ্জল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। নির্বাচনে অল্পের জন্য জয়লাভ করতে না পারলেও ৩২ হাজার ভোট পেয়েছি। সেই তাড়না থেকেই আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত সকলের সঙ্গে আমিও মেনে নেব। তারপরও যেহেতু প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবো সেজন্য কাউন্সিলরদের কাছে সমর্থন চাচ্ছি।তৃণমূলে সম্মেলন না করেই তড়িঘড়ি করে উপজেলার সম্মেলন আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হারিছ রিকাবদার কালা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সময় স্বল্পতার জন্য সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলার সম্মেলনের পর ধারাবাহিকভাবে সবগুলো ইউনিটের সম্মেলন করা হবে।বিএনপির সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আমেজ নেই, রয়েছে পকেট কমিটির আতঙ্ক। জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার পকেট কমিটি হবে না জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, সম্মেলনে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এতে যিনি চান তিনিই প্রার্থী হতে পারবেন।জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিবপুর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে উপজেলা পর্যায়ে দল পুনঃগঠনের কাজ শুরু হচ্ছে। দল পুনঃগঠনে অবশ্যয় ত্যাগী নেতা-কর্মীরা প্রাধান্য পাবে এবং নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীরা বাদ পড়বেন।এমজেড/আরআইপি

Advertisement