জাগো জবস

এইচআর পেশায় কেন আসবেন?

হাবিব উল্লাহ্ বাবু, রকসি পেইন্টস লিমিটেডের হেড অব এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন। এ ছাড়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এইচআর ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সমসাময়িক বিষয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার—

Advertisement

ছোটবেলার দিনগুলো সম্পর্কে যদি স্মৃতিচারণ করেন— হাবিব উল্লাহ্ বাবু: শৈশবের কথা যদি বলতে যাই, তবে ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড দুরন্ত ছিলাম। খেলাধুলার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক ছিল। আরেকটা গুণ ছিল আমার, সব কিছুতেই সামনে থেকে লিড দিতে চাইতাম। স্কুল জীবনের সবটাই ছিল মধুর স্মৃতি দিয়ে ভরা। ৩য় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত একটানা ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলাম। লিডারশিপটা আসলে তখন থেকেই নেশা হিসেবে যুক্ত হয়ে যায়। আমার ডাক নাম বাবু, এটি খুব কমন একটি নাম। কিন্তু স্কুলে স্যারদের দেওয়া একটা নামে সবাই চিনতো। সব কিছুতে লিড দিতাম বলে স্যাররা আমাকে ‘নেতা’ বলে ডাকতেন। তাই স্কুল থেকেই আমার নাম হয়ে যায় ‘নেতা বাবু’। স্কুল জীবন থেকেই কাব-স্কাউট, বিএনসিসিতে যুক্ত ছিলাম। স্কুলের ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল প্লেয়ার ছিলাম। ময়মনসিংহ অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল টিমের প্লেয়ার ছিলাম। খেলেছি বিভিন্ন লিগ পর্যায়েও। ময়মনসিংহ ২য় বিভাগ ক্রিকেট লীগের প্লেয়ার ছিলাম। খেলাধুলাটা ইউনিভার্সিটি লাইফ পর্যন্ত ছাপিয়ে কর্পোরেট লাইফেও ছিল। আমি লম্বা সময় র‌্যাংগস গ্রুপে কাজ করেছি এবং র‌্যাংগস কর্পোরেট ক্রিকেট টিমের প্লেয়ার ছিলাম।

পড়াশোনার কথা বললে, স্কুল জীবন কেটেছে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ মহাবিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ শেষ করে নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ হওয়ায় অনার্স করার জন্য আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হই। তবে সেখানে ভর্তি হয়ে ছোটবেলার সেই লিডারশীপ জাগ্রত হয়ে যাওয়ায় রাজনীতিতে জড়িয়ে যাই। আর সেটাই আমার বাবার চক্ষুশূল হয়। তাই ১ বছর অর্থাৎ ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বেই বাবা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন, আমার আর এই কলেজে পড়া হচ্ছে না। অগত্যা সেই কলেজের পাঠ চুকিয়ে সরাসরি ঢাকায় ট্রান্সফার হয়ে যাই। ঢাকায় এসে বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে ভর্তি হই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। আর বিবিএ লাস্ট সেমিস্টারে মেজর হিসেবে এইচআরএমকে বেছে নেই। আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের উপর। এরপর বিভিন্ন ট্রেনিং, প্রফেশনাল ট্রেনিং, দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন কনফারেন্স জয়েন করে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের উপর দক্ষত অর্জনের চেষ্টা করতে থাকি, যা এখনো চলমান।

এইচআর পেশায় কেন এলেন?হাবিব উল্লাহ্ বাবু: শুরুতেই লিডারশিপের গল্প বলছিলাম। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই লিডারশিপ নিয়ে প্রচণ্ড ঝোঁক আর প্রবল ইচ্ছে ছিল, পাশাপাশি সব সময়ই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাইতাম। তাই আমার কাছে পেশা হিসেবে এইচআরকে সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে হয়েছে। আমি বিবিএ এবং এমবিএ করার সময় ইউনিভার্সিটির স্যারদের কাছ থেকে এবং পরিচিত বিভিন্ন সিনিয়র, যারা ওই সময়ে বিভিন্ন প্রফেশনে এক্সপার্ট ছিলেন; তাদের সাথে পরামর্শ করেই মূলত এইচআর মেজর করার আর ভবিষ্যতে এইচআরে কাজ করার প্ল্যান করি। আরেকটা বিষয় হলো, আমি খুব ছোটবেলা থেকেই দক্ষ অর্গানাইজার। স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম, কালচারাল অ্যাক্টিভিটি, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিগুলোর সাথে যুক্ত ছিলাম। এটিও একটি অন্যতম কারণ, যা আমাকে পরবর্তীতে পেশা নির্বাচন করতে হেল্প করেছে।

Advertisement

জীবনে যা হতে চেয়েছিলেন— হাবিব উল্লাহ্ বাবু: আহা... এটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলার মত প্রশ্ন। কারণ শৈশব, কৈশোর আর স্কুল-কলেজ লাইফের গল্পে আমি উল্লেখ করেছি প্রচণ্ড খেলা পাগল মানুষ ছিলাম। যার ধারাবাহিকতা এখনো কর্পোরেট জীবনেও রয়ে গেছে। আমি খুব ভালো ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলতাম। আমি স্কুল লাইফ থেকেই বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছি। লুকিয়ে লুকিয়ে খেলার সরঞ্জাম কেনা ছিল আমার নেশা। বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমার স্কুলের বন্ধু। আমরা একই কলেজে পড়েছিও। কলেজে রিয়াদ ছিল ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন আর আমি ছিলাম ফুটবল টিমে। জীবনে সত্যিকারভাবে একজন প্রফেশনাল প্লেয়ার হতে চেয়েছিলাম।

যারা এইচআর সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান, করোনা তাদের কেমন বার্তা দিলো? হাবিব উল্লাহ্ বাবু: কোভিড-১৯ সবাইকে কী বার্তা দিয়েছে বা দিয়ে যাচ্ছে, তা পুরোপুরি বলতে না পারলেও এইচআর প্রফেশনাল হিসেবে বলবো- ডিসিপ্লিন ব্যাপারটা পুরোপুরিভাবে আমাদের জীবনে প্রচণ্ড রকমের প্রভাব ফেলেছে আর শিখতে বাধ্য করছে। বিশেষ করে নিজের সুরক্ষা আর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কেউ অতোটা সিরিয়াস ছিলেন না। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা, এই দূষিত বাতাসের শহরে মাস্ক না পরে চলাফেরা, ময়লা-জীবানুযুক্ত হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া, বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করেই অপরিচ্ছন্ন পোশাকে পরিবারের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা একেবারেই মেনে চলতে চাই না।

লক্ষ্য করুন, প্রতিটি অফিস করোনা আক্রমণের আগেই নিজের কর্মকর্তাদের জন্য সব ধরনের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা করেছে। সবগুলো পরিকল্পনা আর কার্যক্রম কিন্তু প্রতিটি কোম্পানির এইচআর ডিপার্টমেন্ট থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। যারা এইচআর সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্যও কিন্তু কোভিড-১৯ এই বার্তাই দিয়ে যাচ্ছে যে, ডিসিপ্লিনের বিকল্প নেই। ডিসিপ্লিন ঠিক রাখতে হলে কোম্পানিগুলোকে পলিসি ফলো করতে হবে। সেই পলিসি কিন্তু তৈরি করার দায়িত্ব প্রতিটি কোম্পানির এইচআর ডিপার্টমেন্টের। পাশাপাশি করোনা মোকাবেলা করে কোম্পানিগুলো যেন নিজেদের জরুরি কার্যক্রম চলমান রাখতে পারে। তার জন্য এমপ্লয়িদের সুরক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যবিধি, নিয়ম প্রস্তুত এবং পরিকল্পনা- সবই কিন্তু এইচআর ডিপার্টমেন্ট করছে। তাই হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। এইচআর প্রফেশনে কাজ করার সুযোগ থাকবেই এবং বাড়তেই থাকবে। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজেদের প্রয়োজনেই এইচআর রিক্রুটমেন্ট চলমান রাখবে।

সামাজিক যেসব সংগঠনের সাথে যুক্ত আপনি—হাবিব উল্লাহ্ বাবু: কলেজ লাইফ থেকেই একজন নিয়মিত ব্লাড ডোনার এবং সন্ধানী-ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একজন সদস্য। এ ছাড়াও আমি এসসিআই (Service Civil International) এর একজন ভলান্টিয়ার, যারা দুস্থ মানুষদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

Advertisement

স্কুলের ব্যাচমেটদের নিয়ে ২০১০ থেকে নিজেদের পার্সোনাল ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণ প্রদান, অস্বচ্ছল মেধাবীদের বৃত্তি প্রদান, স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষকদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদানসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছি। জিলা স্কুলের বন্ধুদের সংগঠনটি ইতোমধ্যে ‘বন্ধু ফাউন্ডেশন-২০০০’ নামে পরিচিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ‘এসএসসি ব্যাচ-২০০০, ময়মনসিংহ’ নামে একটি সংগঠন আছে, যার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষের মাঝে বিভিন্ন আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা করে চলেছি।

ব্যক্তিগতভাবে বিদ্যানন্দ সংঠনটির সাথে জড়িত। করোনা দুর্যোগে আমার ব্যাচের দুটি সংগঠন এবং বিদ্যানন্দসহ আরও কয়েকটি গ্রুপের হেল্প নিয়ে কয়েকটি ধাপে মোট ১৫০০ এর বেশি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিতে পেরেছি। বিশেষ করে সমাজে মধ্যবিত্ত বা কারোর কাছে সাহায্য চাইতে পারে না এমন ঘনিষ্ঠ কিছু পরিবার আর বন্ধুদের তাদের নাম প্রকাশ না করে সামাজিক সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে ১০টি পরিবারকে পুরো রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে ৩ ধাপে ১৫ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা সাহায্য প্রদানের ব্যবস্থা করেছি।

তরুণরা অবসরে কী দক্ষতা অর্জন করলে ভবিষ্যৎ ভালো হবে?হাবিব উল্লাহ্ বাবু: করোনার কারণে লকডাউন পরিস্থিতি তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের একটা সূবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। সাধারণ সময়ে তরুণরা নিজেদের পড়াশোনা, ক্লাস ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ততার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে, খেতে এবং আড্ডা দিতে পছন্দ করে। বিশেষ করে বন্ধুদের আড্ডা পছন্দ করে না, এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই যেহেতু এখন লকডাউনে পুরোপুরি ঘরে থাকতে হচ্ছে- এ সুযোগে তারা নিজেদের বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য ওই আড্ডার বরাদ্দকৃত সময়টুকু দিয়ে নিজেরা লাভবান হতে পারে। আমার মতে, যেকোনো জবের জন্য ইংলিশ এবং কম্পিউটারের কিছু বেসিক জানা জরুরি। তাই এই সময়ে তরুণরা নিজেদের English Speaking, Writing & Listening Skill বাড়াতে পারে। সেই সাথে কম্পিউটারে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে MS Office (MS Word, MS Excel, MS PowerPoint) অন্তত এই সাধারণ বিষয়গুলো খুবই দক্ষভাবে শিখে রাখতে পারে। যা তাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এর সাথে নতুন চাকরিপ্রার্থী যারা; তারা অনলাইনে বিভিন্ন ট্রেনিং, সিভি রাইটিং, প্রেসেন্টেশন স্কিল বাড়াতে যেকোন অবসর সময়কে কাজে লাগাতে পারে। এখনকার সময়ে কিন্তু অনেক সাইটেই প্রফেশনাল এক্সপার্টদের নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক প্রোগ্রাম চালু আছে। তরুণরা চাইলেই সেই লাইভ প্রোগ্রামগুলোতে অংশ নিয়ে প্রফেশনাল এক্সপার্টদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে এবং প্রফেশনাল এক্সপার্টদের অভিজ্ঞতা থেকেও নিজেরা অনেক কিছু শিখতে এবং অর্জন করতে পারে। পাশাপাশি নিজেদের চাকরির জন্যও প্রস্তুত হতে পারে। সবচেয়ে বড় সাপোর্ট হচ্ছে ইন্টারনেট। গুগল সার্চ করেই প্রতিমুহুর্তে তরুণরা তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন রকমের স্কিল নিয়ে জ্ঞানার্জন করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বে এবং দেশের জব মার্কেটগুলোতে লেটেস্ট কী কী বিষয়ে দক্ষতা প্রয়োজন, সেগুলো তারা অনায়াসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে জানতে পারে।

তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য পরামর্শ—হাবিব উল্লাহ্ বাবু: যারা ইতোমধ্যেই পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা জব সার্চ করছেন, তাদের জন্য প্রথম প্রস্তুতি হচ্ছে একটা পারফেক্ট সিভি আর সেই সিভি আপলোড করে জবস সাইটে একটা অ্যাকাউন্ট খোলা। শুধু সিভিতে কিছু ছোটখাট ভুলের জন্য অনেকে ইন্টারভিউয়ে ডাক পান না। এমন অনেককেই আমি চিনি; যারা অনেক দিন যাবত চাকরির অপেক্ষায় থেকে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাদের অভিযোগ, প্রচুর সার্কুলারে অ্যাপ্লাই করেও তারা ইন্টারভিউয়ে ডাক পান না। আমি তাদের এ সমস্যার সমাধান করতে সিভি চাইলাম এবং আশ্চর্যজনকভাবে অসংখ্য তথ্যের ভুল খুঁজে বের করলাম। অনেকেই নিজের সিভি হাইলাইট করার জন্য ভুল তথ্য, এমনকি যে শব্দটার ব্যাপারে সে জানেও না; সেটিও সিভিতে সংযুক্ত করে রাখে। পরিবর্তীতে ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করলে সেটির সঠিক উত্তর না দিয়ে সরি বলে পাশ কাটিয়ে যায়। এটি খুবই নেগেটিভ চাকরিপ্রার্থীর জন্য।

সিভিতে সব সময় সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই রিসেন্ট ছবি সিভিতে সংযুক্ত করতে হবে। অন্যথায় ইন্টারভিউ বোর্ডে পুরোনো ছবির সাথে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিকে মেলাতে কষ্ট হয়ে যাবে। সিভিতে অবজেকটিভ লিখার ব্যাপারে ৯০% চাকরিপ্রার্থী অন্যেরটা কপি করে। যা একেবারেই বোকামি। কিছু কিছু চাকরিপ্রার্থী জব খুঁজছে মার্কেটিংয়ের, অথচ হয়তো ভালো কোন এইচআরের সিভি পেয়ে তার অবজেকটিভটা কপি করে দিলো। কিন্তু নিজে একবার ভালো করে পরেও দেখলো না। এই মাইনর ভুলগুলো সিভি বাছাইয়ের সময় খুবই স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। এমন ভুলেভরা সিভি আগেই ইন্টারভিউ কল থেকে বাদ পড়ে। একজন চাকরিপ্রার্থী তার সিভি দিয়েই কিন্তু চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আর একটা অনলাইন সিভি বা হার্ড কপি সিভি বাছাই করতে একজন এইচআরের হাতে খুবই কম সময় বরাদ্দ থাকে। তাই নিজের সিভির এ ভুলগুলো নিজেকেই শুধরে নিতে হবে। অনেকেই আছেন হার্ড কপি সিভি জমা দেওয়ার সময় নিজের ছবিটি স্টেপলিং করতে বা আঠা দিয়ে লাগাতে ভুলে যান। সেই খোলা ছবি খামে ভরে দেয়, এটা খুব বড় একটা ভুল। সিভি বাছাইকারীর এত সময় নেই যে, সে আপনার সিভি খুলে ছবি বের করে স্টেপলিং করে বা আঠা দিয়ে সিভিতে লাগিয়ে দেবেন।

এখন আসি জব ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে, যখন কোন চাকরিপ্রার্থী সঠিক সিভি প্রদানের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ের কল পাবেন; তখন ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার আগে কিছু হোম ওয়ার্ক আছে। এগুলো করে নিলে তার জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডে উত্তর দেওয়া সহজ হবে। সাধারণত একজন ফ্রেস চাকরিপ্রার্থীর জন্য কমন একটি প্রশ্ন হলো, ‘Introduce Your self’। খুবই সাবলীলভাবে স্পষ্ট এবং শুদ্ধ ইংরেজিতে নিজের সম্বন্ধে একটা সামারি প্রশ্নকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। আর অবশ্যই যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, ইন্টারনেট সার্চ দিয়ে তাদের চেয়ারম্যানের নাম, ব্যবসার ধরন, প্রোডাক্ট, কতগুলো অফিস, ইউনিট, ফ্যাক্টরি, তাদের কম্পিটিটর কোম্পানি কারা- এ সাধারণ বিষয়গুলো হোম ওয়ার্ক হিসেবে প্র্যাকটিস করে গেলে এবং সঠিকভাবে উত্তরগুলো দিতে পারলে অন্য চাকরিপ্রার্থীর তুলনায় আপনি অনেক এগিয়ে যাবেন। প্রশ্নকর্তাও আপনার এ হোম স্টাডিতে খুশি হবেন।

ফ্রেশারদের জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডে কিছু শিষ্টাচার মেনে চলা জরুরি- প্রথমটি হলো ইন্টারভিউয়ের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছাতে হবে। শুধু দেরি হওয়ার কারণে অনেকেই ইন্টারভিউ মিস করেন। অবশ্যই পরিপাটি হয়ে অফিসিয়াল ড্রেসআপ, কর্পোরেট লুক, ক্লিন সেভড, পলিশ সু, পরিচ্ছন্ন পোশাক মেনটেইন করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই পারসোনাল হাইজিন বা পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি খেয়াল করেন না। তাড়াহুড়ো করে হন্তদন্ত হয়ে ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত হওয়ায় অনেকেরই ঘামে শার্ট বা পোশাক ভিজে থাকে। যখনই আপনি বোর্ডের সামনে বা প্রশ্নকর্তার মুখোমুখি হচ্ছেন, আপনার অপরিচ্ছন্নতার জন্য খুব কম সময়েই হয়তো প্রশ্নকর্তা আপনাকে ছেড়ে দিল এবং নিজেও বিব্রত বোধ করতে লাগলো। তাই নিজের ফ্রেশনেসের জন্য ছোট্ট পকেট পারফিউম সাথে রাখতে পারেন। যদি এমন কোন প্রশ্নের মুখোমুখি হোন, যেটি আপনার জানা নেই; সেটি নিয়ে শুধু শুধু প্রশ্নকর্তার সামনে কনফিউজিং ভাব না নিয়ে বা মাথা না চুলকে সরাসরি বলুন আপনি জানেন না। মনে রাখবেন, আপনি নতুন চাকরিপ্রার্থী- সব প্রশ্নের উত্তরই যে আপনি পারবেন, এটা ভাবাও প্রশ্নকর্তার উচিত হবে না। সবশেষে যে বিষয়টি বলবো, মনে সাহস আর কনফিডেন্স রাখুন।

মনে রাখবেন, আপনি নিজেকে আর নিজের যোগ্যতাকে যাচাই করতেই ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন। জব হতেই হবে এমন টেনশন নিতে থাকলে নিজের কনফিডেন্সে ঘাটতি পড়বে। সেই সুযোগে অন্যরা সাবলীল ইন্টারভিউ দিয়ে আপনার হতে যাওয়া নিশ্চিত চাকরি আপনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবে। একটা সার্কুলারে অনেক প্রার্থীর ভিড়ে কিন্তু চাকরি সবারই হবে না। তাই প্রতিটি ইন্টারভিউয়ে নিজের গ্যাপ আর ঘাটতিগুলোকে খুঁজে বের করুন। সেগুলোকে পরবর্তী ইন্টারভিউয়ের আগেই রিকভার বা ঠিক করে ফেলুন। ইনশাআল্লাহ চাকরি আপনাকে খুঁজে বের করবে। আপনাকে হন্যে হয়ে চাকরির পেছনে ছুটতে হবে না।

এসইউ/এমএস