একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক হবিগঞ্জ জেলার দুই ভাই মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ বুধবার শুরু হয়েছে।প্রসিকিউশনের আনা প্রথম সাক্ষীর বাড়ি হবিগঞ্জের খাগাওড়া ইউনিয়নে। প্রথম সাক্ষী মোস্তর আলী (৬২) তার সাক্ষ্যে বলেন- একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর মহিবুর, মজিবুর ও আব্দুর রাজ্জাকের নের্তৃত্বে রাজাকাররা আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী পালাতে চেষ্টা করলে মহিবুর রহমান তাকে গুলি করে হত্যা করে। বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী গ্রহণ করার পর মামলার কার্যক্রম মুলতবির আদশ দেন। ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতিরা হলেন- মো. শাহিনুর ইসলাম ও মো. সোহরাওয়ারদী।এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর সুলতানা রেজিয়া। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী মো. কিবরিয়া হোসেন। তিনি সাক্ষীকে আংশিক জেরা করেন। পরে মামলার কার্যক্রম আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।সাক্ষী মোস্তর আলী বলেন, একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর আমার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি রাজাকাররা জেনে যায়। পরে মহিবুর, মজিবুর ও আব্দুর রাজ্জাকের নের্তৃত্বে রাজাকাররা আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে। আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আসামী মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকাররা আমার বড় ভাই আকল আলীকেও ধরার জন্য নির্দেশ দেয়। এবং রাজাকাররা আমার বড় ভাই আকল আলীকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এ ঘটনা সাক্ষী নিজের চোখে দেখেছেন। পরে আমার ভাই আকল আলীকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে। সাক্ষী বলেন, আমার ভাই আকল আলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবেশী তরাজউল্যা দেখে ফেলে। তরাজউল্যার মতে, আসামি মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, আসামি মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া এবং আসামি আব্দুর রাজ্জাকসহ আরো কয়েকজন রাজাকার সেখানে ছিলো।সাক্ষী বলেন, আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি আর্মিরা উত্তর হাটির নুরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দুই জন নারীকে ধর্ষণ করে। পরে জানা যায় ওই জনের এক জন্য বিষপান করে আত্মহত্যা করে। আসামিদের শনাক্ত করেন সাক্ষী।এর আগে গত ১৭ মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিলো রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। গত ২৯ এপ্রিল তিন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। বড় মিয়া-আঙ্গুর মিয়া ও রাজ্জাকের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে রয়েছে।এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- রজব আলীকে অপহরণ করে হত্যা, একাত্তরে দু’জনকে ধর্ষণ করে হত্যা, আরেকজনকে আটকের পর নির্যাতন করে হত্যা এবং এমএ রবের ওপর নির্যাতন সহ তার বাড়ি ও এর আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।এর আগে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাসে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এতে ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement