ফারিয়া ইয়াসমিন
Advertisement
পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু নানা কারণে পরিবেশ দূষণ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করায় মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির মুখে। এ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৫ জুনকে ঘোষণা করেছে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে। জাতিসংঘ ১৯৭২ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের বিষয়টি সবার সামনে নিয়ে আসে।
১৯৭২ সালের ৫ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনাইটেড নেশন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্ৰাম) সম্মেলনে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরপর থেকেই প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য গৃহীত হয়েছে বিভিন্ন কার্যক্রম। পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের মানুষ আজ এগিয়ে এসেছে । এ ব্যাপারে বাংলাদেশও বসে নেই, পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে।
Advertisement
তবুও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণের ভয়াবাহতা সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হয়নি। মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মেতেছিল। প্রকৃতিকে জয় করতে যেয়ে মানুষ নিজেদের ফেলে দিল এক বড় পরাজয়ের মধ্যে। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে আজ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শঙ্কায় ধুঁকছে। অপেক্ষা করছে এক মহাধ্বংস। আজ জলে বিষ, বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস। দ্রুত গতিতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সবুজ অরণ্য। যেখানে বাংলাদেশে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা আছে মাত্র ১৬ ভাগ। প্রতিবছর ৭০ লক্ষ্য হেক্টর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত কয়েকটি শহরের মধ্যে প্রথম দিকে আছে আমাদের ঢাকা। আমাদের ঘর থেকে বের হলেই মুখোমুখি হতে হয় ভয়ানক ক্ষতিকর পরিবেশের সাথে। বাংলাদেশ থেকে চোখ সরিয়ে আমরা যদি বিশ্বের দিকে তাকাই, জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্ৰামের হিসাব মতে, পৃথিবীর ৯২ শতাংশ মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নেয়। বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয় এই অবস্থার উন্নতিতে।
পরিবেশবিদদের মতে ২০৩০ সাল নাগাদ গ্ৰাউন্ড লেভেলের ওজন দূষণের কারণে শস্যের পরিমাণ কমে যাবে ২৬% যা উদ্বেগজনক। প্রকৃতিগত অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ টিকে থাকলেও আজ আর সেই অবস্থা নেই। বাংলাদেশ এখন পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচা তো দূরের কথা, এখন বাংলাদেশে কীভাবে টিকে থাকবে সেটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে করোনাকালে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক সংবাদ হচ্ছে, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা বলছে, গত চার বছরের মার্চের সঙ্গে চলতি মার্চ মাসের ঢাকার বায়ুর মানের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গতকাল ২৭ মার্চ শুক্রবার ঢাকার বায়ুর মান ছিল সবচেয়ে ভালো। ২০১৬ থেকে চলতি মাসের ২৫ মার্চ পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ক্যাপস দেখেছে, এ চার বছরে মার্চ মাসজুড়ে ঢাকায় গড়ে বায়ুর মান সূচক বা (একিউআই) ছিল ২০০-এর মধ্যে।
Advertisement
আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এয়ারভিজ্যুয়ালের তথ্য বলছে, ঢাকার বায়ুর মান ছিল ১১৪। চার বছর ধরে বায়ুদূষণের দিক থেকে বরাবরই ঢাকা থাকত শীর্ষে। কখনো দুইয়ে। কখনো চারে। তবে এবার ঢাকা নেমে গেছে ৯ নম্বরে। সবার উপরে উঠে এসেছে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেভ, ওই শহরে বায়ুর মান সূচক ১৮৫। যা যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অস্বাস্থ্যকর। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সার্বিয়ার বেলগ্রেড, সেখানকার বায়ুর মান সূচক ছিল ১৮২। ৩ নম্বর অবস্থানে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটর।
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে নিজেরা নিজেদেরকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত না করি। আর যদি পরিবেশ ভালো থাকে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে। ফলে মানুষ ফুসফুসের বিভিন্ন জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
এদিকে বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন একটা বিশেষ মাত্রা লাভ করেছে। সরকারের পরিবেশ দপ্তর, বন দপ্তর নানা অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে দিয়ে দিনটি উদযাপন করছে। বড় মাপের উদ্দ্যেগ বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছোট ছোট পরিবর্তন উভয়ই দরকার সুস্থ পরিবেশ গড়ার জন্য। আজ সবচেয়ে জরুরি পরিবেশ সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা।
এই দিনটি তাই নিছক আনন্দ অনুষ্ঠানের দিন নয়। জরুরি হলো এই দিনে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করা। মানুষকে গড়তে হবে নতুন সবুজের পৃথিবী। নতুন চেতনায় এবং পরিবেশ রক্ষার কর্মকাণ্ডের ফলে প্রকৃতির রুদ্ধ আক্রোশ থেকে মানুষ রক্ষা পাবে। তাই সকলের উচিত পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার অঙ্গীকারে বদ্ধ হওয়া।
লেখক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/বিএ/এমএস