জাতীয়

ভয়-আতঙ্ক নিয়েই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চেষ্টা মানুষের

রাজধানীসহ সারাদেশে গত তিন দিনে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) ৮ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত এবং শতাধিক নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শীর্ষ ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা।

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে প্রতিদিন সারাদেশের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের যে সংখ্যা বলা হয়, প্রকৃতভাবে আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা তারও অনেক বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি।

সূত্র বলছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব রোগী মারা যাচ্ছে, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে আসছে না।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৫৬৩ জনে। গত ১৭ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। আজ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮১ জনে

Advertisement

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। কয়েক দফা ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলেও ৩১ মে থেকে ছুটি আর বাড়ানো হয়নি। দুই মাসেরও বেশি সময় পর গত ১ জুন থেকে গণপরিবহন, রেল, নৌ ও আকাশপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। মার্কেট ও শপিংমল, ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হয়েছে।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যা যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। ভয় ও আতঙ্ক থাকলেও রাজধানীতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। ফুটপাতের চা বিক্রেতা, দিনমজুর ও রিকশাচালক থেকে শুরু করে শিল্পপতিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাভাবিক সময়ের মতো কার্যক্রমে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। পার্থক্য শুধু এতটুকুই, আগে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললেও বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের ভয় আর আতঙ্ক থাকলেও অসংখ্য মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়ে আসছে। সকালে উঠে কেউ চাকরিতে কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। রাস্তাঘাটে গণপরিবহনসহ অসংখ্য যানবাহন চলাচল করছে।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার দোকানের মালিক হাছান মাহমুদ বলেন, দুই মাস দোকান বন্ধ থাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছিল। গত ১ জুন থেকে দোকান খুলেছি। করোনার ভয়ে ক্রেতা আসবেন কি-না ও বেচাকেনা আদৌ হবে কি-না দুশ্চিন্তায় থাকলেও, আল্লাহর রহমতে ক্রেতারা আসছেন, বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে।

Advertisement

আজিমপুরের হোটেল ব্যবসায়ী আজমত আলী জানান, দুই মাস পর আজ হোটেলের চুলা জ্বলছে। করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে হোটেলের কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা করেছেন এবং আগতদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে কয়েকজন তরুণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুটপাতের দোকানের গরম সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। মুখ থেকে বারবার মাস্ক সরিয়ে সিঙ্গারা খেয়ে আবার মাস্ক পরার দৃশ্য দেখে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছিলেন তারা।

তাদের একজন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কবে বন্ধ হবে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলতে পারছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে বলা হচ্ছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে সবাই করোনাকে সঙ্গে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে।

এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ