‘বাসুদার সঙ্গে তো আমার ক্যারিয়ারের হাতেখড়ি। আমার মনে আছে, বাসুদা আমাকে শিখিয়েছেন ক্যামেরার সামনে কীভাবে অভিনয় করতে হয়! উনি যখন বলতেন ডানে তাকাও, বামে তাকাও, তখন আমি ক্যামেরার ডান-বামও ভালো করে বুঝতাম না। উনার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি।’ কথাগুলো বলছিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস।
Advertisement
আজ বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ খ্যাত নির্মাতা বাসু চ্যাটার্জি। এই সিনেমায় নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। এই পরিচালকের চারটি বাংলা সিনেমার মধ্যে তিনটিতেই অভিনয় করেছেন তিনি। প্রিয় এই নির্মাতাকে হারিয়ে আজ শোকাহত হঠাৎ বৃষ্টির নায়ক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রিয় নির্মাতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ফেরদৌস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যামেরা-লাইট সম্পর্কে বেশি ভালো জানতাম না তখন। বাসুদা আমাকে হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিলেন সব। তার কাছ থেকে অভিনয় শিখেছি। তার জন্যই আমার আজকের ফেরদৌস হয়ে ওঠা। তার সঙ্গে তখন যদি ছবি না করা হতো, তাহলে হয়তো দু-একটা ছবি করে অন্য পেশায় চলে যেতাম আমি। তার ছবিতে অভিনয় করেই জীবনের মোড় ঘুরে গেল আমার।’
ফেরদৌস আরও বলেন, ‘বাসুদার জন্যই তৈরি হয়েছে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ আর ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র জন্যই তৈরি হয়েছে নায়ক ফেরদৌস। আমি আজীবন তাকে মনের ভেতরে লালন করে যাব, ধারণ করে যাব। উনি আমার মেন্টর, আমার গুরু, আমার পিতা ছিলেন। তার সঙ্গে আমার অদ্ভুত একটা সম্পর্ক ছিল। অসাধারণ মানুষ ছিলেন উনি। যখন আমার সঙ্গে মিশতেন তখন মনে হতো উনি আমার ক্লাস ফ্রেন্ড। কখনো মনে হতো শিক্ষক। কীভাবে সময় মেনটেইন করতে হয়, মানুষকে সম্মান করতে হয় সেগুলো আমাকে শিখিয়েছেন উনি।’
Advertisement
কেমন ছিলেন সবার বাসুদা? ফেরদৌস বললেন, ‘তার বড়গুণ ছিল, যা বলার মুখের উপরে বলে দিতেন। হাজারও ঘটনা আছে তার সঙ্গে। ২৩ বছরের সম্পর্ক আমাদের। গত কয়েক বছর ধরে তার স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছিল। মনে থাকতো না কিছু। আমার সঙ্গে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে দেখা হয়েছিল কলকাতায়। তখনই দেখলাম তার শরীর ভেঙে যাচ্ছে। সেই সময়ও আমাকে বললেন যে নতুন একটা ছবি করবেন।
নতুন ছবির চিত্রনাট্যও তৈরি করেছিলেন। গল্পও ফাইনাল করেছিলেন। তখন তার পরিবার থেকে আমাকে বলা হলো, আমি যেন ছবিটা না করি। কারণ উনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। সেই সময় এত বড় কাজের ভার নিতে পারবেন না উনি।’
ফেরদৌসকে অনেক পছন্দ করতেন বাসুদেব চ্যাটার্জি। সেই কারণেই হয় তো তার নির্মিত পাঁচটি বাংলা ছবির মধ্যে চারটিতেই নায়ক বানিয়েছিলেনে ফেরদৌসকে।
এই প্রসঙ্গে নায়ক বলেন, পাঁচটা বাংলা সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে চারটা সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি। বার্ধক্যজনিত কারণে উনি চলে গেছেন। এরপরও আমার জন্য অনেক কষ্টের ব্যাপার এটা। তার চলে যাওয়া আমার কাছে পিতৃবিয়োগের মতো। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। বাংলা চলচ্চিত্রের একটা সুবাতাস দিয়ে গেছিলেন তিনি ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দিয়ে। আজীবন বাঙালি দর্শক তাকে মনে রাখবে একটা ছবির জন্য।
Advertisement
বাসু চ্যাটার্জি ১৯৩০ সালে ভারতের রাজস্থান প্রদেশের অজমের শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাই থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক একটি ট্যাবলয়েডে অঙ্কনশিল্পী এবং কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরুর আগে রাজ কাপুর ও ওয়াহিদা রহমান অভিনীত ‘তিসরি কসম’ চলচ্চিত্রে বাসু ভট্টাচার্যর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন বাসু। নিজের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘সারা আকাশ’ (১৯৬৯)। এর জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি।
‘ছোটি সি বাত’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘বাতো বাতো মে’, ‘চামেলি কি শাদি’, ‘এক রুকা হুয়া ফয়সলা’, ‘কমলা কি মৌত’,-এর মতো অনেক দর্শকপ্রিয় বলিউড সিনেমা নির্মাণ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ভারতীয় বাংলা সিনেমা নির্মাণের জন্যও অমর হয়ে থাকবেন এই গুণী নির্মাতা।
এমএবি/পিআর