দেশজুড়ে

মসজিদের ইমামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরালেন চেয়ারম্যান

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মসজিদের ইমাম ও দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

Advertisement

এদিকে মসজিদের ইমামকে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে তাকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর আদেশ দেয়া হয় বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। বুধবার (৩ জুন) দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছনার শিকার শহিদুল ইসলাম দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং স্টিমারঘাটের অদূরে সিকদার বাড়ি মসজিদের ইমাম।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ির নির্দেশে তার কার্যালয়ে সালিশ বসানো হয়। এ সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) শহিদুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বর) মো. ফিরোজ, বজলু আকন, আবুল বয়াতী, মো. কামরুজ্জমান, রিন্টু দেওয়ানসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, ২০১৯ সালে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল হিসাব নম্বর পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর সময় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মাদরাসায় না আসায় সেখানে শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর এক বছরের উপবৃত্তির ১৮০০ টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়। বিষয়টি শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রীর অভিভাবককে জানাতে ভুলে যান।

পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে ওই ছাত্রীর বাবা ৩০ মে মাদরাসায় এসে শহিদুল ইসলামকে মারধর করেন এবং তার মোবাইলের সিমটি নিয়ে যান। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি সালিশের নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে উপস্থিত থাকতে আগেই শহিদুল ইসলামকে জানিয়ে দেয়া হয়। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হলে শহিদুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়া হয়। এরপর জুতার মালা পরিয়ে স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। এ ঘটনার পর লজ্জা ও অপমানে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।

দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে শুনেছি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ির নির্দেশে শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়েছে। এটা উচিত হয়নি। শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তারা মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন।

লাঞ্ছনার শিকার শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা যে সিমে এসেছে, সেই সিমটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আর অফিসে নানা কাজের চাপে বিষয়টি মনেও ছিল না। কিন্তু এত ছোট একটি বিষয় নিয়ে এত কিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে কেউ কোনোদিন অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু সামান্য একটি ভুলের জন্য যে অবিচার আমার ওপর করা হয়েছে তাদের বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিলাম।

Advertisement

উপজেলা নির্বাহী অফিসার পীযুষ চন্দ্র দে বলেন, রাতে ঘটনাটি জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রতক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে রিপোর্ট দিতে বলেছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার দাস বলেন, উপবৃত্তির টাকা নিয়ে যাই হোক, তার বিচারের এখতিয়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেই। যা ঘটেছে তা লজ্জাজনক। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আজ সকাল ১০টায় জরুরি সভা তলব করেছেন। সেখানে পরবর্তী করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। প্রয়োজনে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

অভিযুক্ত দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি জানান, শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি দুই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি একটি ইন্সুরেন্স কোম্পনিতে চাকরি করেন। কয়েকগুণ টাকা মুনাফা দেয়ার কথা বলে লোকজনদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সম্পতি তিনি বরিশাল নগরীতে ৩০ লাখ টাকার জমি কিনেছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি সালিশ বৈঠক করেছেন। সালিশ বৈঠকে তাকে ওই সব টাকা ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। তিনি অপারগতা প্রকাশ নিজেই জুতার মালা পরেছেন।

সাইফ আমীন/বিএ