জাতীয়

নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ পাচ্ছেন না সরকারি হাসপাতালের রোগীরা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীরা নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতদিন সিলিন্ডারের অক্সিজেনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হলেও বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সীমিত সংখ্যক সিলিন্ডার দিয়ে সব রোগীকে পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় সব হাসপাতালগুলোতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী সাধারণ ওষুধ খেয়েই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু অবশিষ্ট ১০ শতাংশ রোগীদের মধ্যে অনেকের হালকা থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। এ সময় রোগীদের অক্সিজেনের লেবেল কমে যায়। তাই এ ধরনের রোগীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করাই হলো মূল চিকিৎসা। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৭ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিন অনুসারে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ৭০৯ জনের করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। তবে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে রোগীর মৃত্যু হয়েছে-এমন অভিযোগও রয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার এক চিঠিতে রাজধানীসহ সারাদেশের ৩৯টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, বিশেষায়িত এবং ২৫০ শয্যার হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম।

চিঠিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য নির্মিত চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক নির্মিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন না থাকায় রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় করোনা রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের নিমিত্তে যেসব হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাংক এখনও স্থাপন করা হয়নি, সেসব হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের (প্রয়োজনে গ্যাস সিস্টেম লাইন সম্প্রসারণ) জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩৯টি হাসপাতালের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে ১৮টি। এগুলো হলো-ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বগুড়া, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিনাজপুর, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিশোরগঞ্জ, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টাঙ্গাইল, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গাজীপুর, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মৈত্রী হাসপাতাল ঢাকা।

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের সংখ্যা ১৬টি। এগুলো হলো-সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ঢাকা, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মুন্সিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, জামালপুর জেলা হাসপাতাল, হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল এবং মাগুরা জেলা হাসপাতাল।

Advertisement

বিশেষায়িত হাসপাতালের সংখ্যা পাঁচটি। এগুলো হলো-শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাতাল খুলনা, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঢাকা, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান ঢাকা, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ঢাকা এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল ঢাকা।

এমইউ/এসআর/পিআর