করোনা সন্দেহে স্বজনরা ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখার পর ষাটোর্ধ্ব সাহাব উদ্দিনের নির্মম মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার (৩১ মে) রাতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া গ্রামে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সাহাব উদ্দিন মারা যাওয়ার পর চাঞ্চল্যকর এ তথ্য বেরিয়ে আসে।
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রামের একটি পেট্রোল পাম্পে চাকরি করতেন সাহাব উদ্দিন। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৭ মে বুধবার নিজ বাড়িতে আসেন তিনি। শনিবার রাতে শরীর আরও খারাপ হলে রোববার দুপুরে নিজে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা কথা বলা বন্ধ করে দেয়। সাহাব উদ্দিন দোতলা বাড়ির নিচ তলার একটি কক্ষে অবস্থান করলে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা ওই কক্ষের দরজার ছিটকিনি মেরে দ্বিতীয় তলায় চলে যায়। দুপুরের খাবারও দেয়া হয়নি তাকে।
বিকেলে সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার ও পানি চাইলেও কেউ দেয়নি। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে বোনেরা বাধা দেয়। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয় সাহাব উদ্দিনের। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে তিনি মারা গেছেন। এ সময় ছোট ছেলে চিৎকার করে কান্না শুরু করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। কিন্তু এর আগে স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়েসহ স্বজনরা পালিয়ে যায়। সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও তিন জামাতা রয়েছে। ঘটনার সময় দুই ছেলে কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকলেও বাকিরা বাড়িতে ছিল।
Advertisement
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফেরদৌস রাসেল বলেন, বাড়ির একটি কক্ষের দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। সেটি খুলে আমরা ভেতরে বিভৎস দৃশ্য দেখতে পাই। সম্ভবত সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল এবং তিনি তা সহ্য করতে না পেরে মেঝেতে গড়াগড়ি করেছিলেন। তার পরনের কাপড় খোলা অবস্থায় পাশে পড়েছিল। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মরদেহ উদ্ধার করে দাফন করা হয়।
মতিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান বাবু বলেন, সাহাব উদ্দিনের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান। মৃতের স্ত্রী, মেয়ে, জামাই কেউ মরদেহ দাফনে আসতে রাজি হয়নি। বার বার অনুরোধ করার পরও তার আত্মীয়-স্বজনরাও আসেনি। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মৃতের দাফনের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দাফনের জন্য পিপিই ও সোনাগাজী থানা থেকে মরদেহের জন্য ব্যাগ আনা হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে জানাজা ও দাফনের কাজ সম্পন্ন হয়।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. উৎপল দাস বলেন, গত রোববার বিকেলে ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখনও তার ফলাফল আসেনি।
রাশেদুল হাসান/আরএআর/জেআইএম
Advertisement