সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের জীবনের তোয়াক্কা না করে শুধু জীবিকার অজুহাত দিয়ে গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেয়ায় প্রমাণিত হয় এই সরকার অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক।’
Advertisement
মঙ্গলবার (২ মে) অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, 'সারা জাতির জীবন ও মৃত্যু নিয়ে সরকার ট্রায়াল কেস করছে। করোনাভাইরাসের আঘাতে কত মৃত্যু ও আক্রান্ত হবে সেটি সরেজমিনে স্বচক্ষে দেখার জন্য গণপরিবহনসহ অফিস-আদালত খুলে দেয়া হয়েছে। একটি সরকার ম্যান্ডেটবিহীন হলেই কেবল এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। গত পরশু থেকে সরকারের শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর কথা থাকলেও সেটি কোনোক্রমেই বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানো হবে এই শর্ত দিয়ে অনুমতির কথা বলেছে সরকার। কিন্তু বাস, লঞ্চ, টেম্পু, অটোরিকশাসহ সবধরনের গণপরিবহনেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসগুলোতে ঠেলাঠেলি করে মানুষ ভেতরে ঢুকছে। অথচ শর্ত ছিল অর্ধেক যাত্রী তোলা হবে। কোনো কোনো বাসে ছাদের ওপরেও যাত্রী তোলা হয়েছে।'
'ঢাকা থেকে কোনো কোনো বাসে অর্ধেক যাত্রী তোলা হলেও ঢাকার বাইরে গিয়ে বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গণমাধ্যমে আরও প্রকাশিত হয়েছে যে, বাসে ৬০ শতাংশ ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও ৮০ শতাংশ অথবা এর চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। লঞ্চে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকা দূরে থাক, সেখানে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। আসলে সরকার সিন্ডিকেটের কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে।'
Advertisement
তিনি বলেন, 'এগুলো সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতারই নিদর্শন। সরকার শুধু বিরোধী দল ও মতকে নিষ্পেষণ এবং নির্যাতনে সক্ষমতা অর্জন করেছে কিন্তু দুর্যোগ, মহামারি, দুর্ভিক্ষ এবং জনসাধারণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।'
রিজভী বলেন, 'বাংলাদেশে করোনা ভয়ঙ্কর রাক্ষুসী চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশে করোনায় শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন। যেখানে ইরান, ইতালি ও স্পেনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এর মধ্যে জার্মানিতে সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৯০ শতাংশ এবং ভারত ও পাকিস্তানে বাংলাদেশের দ্বিগুণ। অথচ বাংলাদেশে সুস্থ হয়ে ওঠার হার সর্বনিম্ন হওয়ার পরও তা বিবেচনায় না নিয়ে সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে কার স্বার্থে? সারাদেশকে কি সরকার গোরস্থান বানাতে চায়?'
'আসলে সরকার যা কিছু করছে, তা নিজেদের সিন্ডিকেটের স্বার্থকে রক্ষা করতে। সরকার জনস্বার্থে সফল নয়, কিন্তু দুষ্কর্মের সাথী হতে খুবই দক্ষ। কে কোথায় ফেসবুকে কী পোস্ট করছে সেটি হরদম মনিটরিং করছেন সরকারের গোয়েন্দারা।'
তিনি বলেন, 'পোস্টগুলোতে সরকারবিরোধী কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য থাকলেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের গুম, নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেফতারসহ নানা নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। অথচ এক্সিম ব্যাংকের এমডি-ডিএমডিকে গুলি করার হুমকি এবং নির্যাতনের জন্য মামলায় অভিযুক্ত শিকদার গ্রুপের ভ্রাতৃদ্বয় নাটকীয়ভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে সক্ষম হলেন। যখন কোভিড-১৯ মহামারির জন্য কিছু চার্টার্ড বিমান ছাড়া সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ তখন কীভাবে রণ হক শিকদার এবং দিপু হক শিকদার বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেন, তা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর।'
Advertisement
রিজভী বলেন, 'এর পেছনে যে ক্ষমতার আশীর্বাদ আছে সেটি এখন সুস্পষ্ট। সন্ত্রাসী কায়দায় ব্যাংক লুটকারীদের পালাতে সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে যে, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল সংকটাপন্ন দু’জন প্যাসেন্টকে বহনকারী একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সকে ল্যান্ডিং পারমিশন দেয়ার জন্য। এভাবে শিকদার ভ্রাতৃদ্বয় মেডিকেল ভিসা ম্যানেজ করে দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে গমন করেন। এটি সম্পূর্ণরূপে স্টেট টেরোরিজম। দু’জন দুরন্ত অপরাধীকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ ছাড়ার সুযোগ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরা মূলত ব্যাংকের টাকা লুটে খাওয়ার জন্য এক্সিম ব্যাংকের এমডি-ডিমডিকে তুলে নিয়ে হুমকি ও নির্যাতন করেছে। অতীতেও বর্তমান সরকার ব্যাংক লুটকারীদের নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে নিরাপদ করেছিল, এটি তার আরেকটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।'
'সেজন্যই জনগণের জীবনের তোয়াক্কা না করে শুধু জীবিকার অজুহাত দিয়ে গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেয়ায় প্রমাণিত হয়, এই সরকার অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক',- বলেন বিএনপির এই নেতা।
কেএইচ/জেডএ/এমএস