অর্থনীতি

৯ মাসে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি

রফতানি আয়ের নিম্নগতির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ দুই হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয় কমায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো বিশ্ব। এতে করে নেতিবাচক ধারায় থাকা দেশের রফতানি আয় মার্চে আরও ধস নামে। অন্যদিকে অর্থনীতির চাঙ্গা রাখার প্রধান সূচক রেমিট্যান্স আয়ও মার্চে কমে যায়। এসব কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে চার হাজার ৩৩ কোটি ডলার।

Advertisement

সেই হিসাবে মার্চ শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় এক লাখ দুই হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ২২০ কোটি ১০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে, আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা ঋণাত্মক হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গেল অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। মার্চেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

Advertisement

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মার্চ শেষে চলতি হিসাবে ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ৪২১ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে প্রথম নয় মাসে সামগ্রিক লেনদেনে বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল।

আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৮৩২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৫০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে নয় মাসে সেবায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। যা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সমেয় ঘাটতি ছিল ২৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৪৫ কোটি ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই কমেছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ ও নিট কমেছে ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

এদিকে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গত বছরের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ কমেছে। আলোচিত সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র এক কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

এসআই/বিএ/এমকেএইচ