করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত কোভিড-১৯ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই এর কড়াল থাবা বিস্তৃত করেছে। এই বিশ্ব মহামারীর কারণে আমাদের সামগ্রিক জীবনযাপনে বহুবিধ পরিবর্তনও এসেছে। সার্স কোভ২ নামক করোনাভাইরাসের এ সংস্করণটি একদমই নতুন হওয়ায় আগে থেকেই কোনো কার্যকর চিকিৎসা, ভ্যাকসিন বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার সুযোগ ছিল না। সে জন্য এর চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে এখনো নিরন্তর গবেষণা চলছে।
Advertisement
এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, এজিথ্রোমাইসিন, আইভারমেকটিন, ফ্যাপিরাভির, রেমডিসিভির, প্লাজমা থেরাপি ইত্যাদি দিয়ে করোনার চিকিৎসায় ট্রায়াল দেওয়া হচ্ছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো পর্যন্ত করোনার চিকিৎসায় চূড়ান্তভাবে কোনো ওষুধের নাম অনুমোদন করেনি। তার পরেও করোনার চিকিৎসায় কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি আশাব্যঞ্জক ফলাফল দিচ্ছে।
প্লাজমা থেরাপি কী: একটি ভাইরাস সংক্রমণের পর একজন রোগীর শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক নিয়মে ভাইরাস প্রতিরোধী একধরনের প্রোটিন তৈরি হয়, যা অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত। এই অ্যান্টিবডি থাকে রক্তের জলীয় অংশ বা প্লাজমাতে। রক্তের প্রায় ৫৫% হলো রক্তরস বা প্লাজমা। ভাইরাসটি থেকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠার পর ওই রোগীর শরীর থেকে যে প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়, তার নামই হচ্ছে ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা’।
এই প্লাজমা ওই একই ভাইরাসে আক্রান্ত অন্য একজনের শরীরে শিরাপথে প্রবেশ করিয়ে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাকেই বলা হয় ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’। যেহেতু এই প্লাজমাতে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আছে এবং তা সেরে ওঠা একজন রোগীর শরীর থেকে সংগ্রহ করে অন্য একজন আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করা হয়, সে কারণে একে ‘প্যাসিভ অ্যান্টিবডি থেরাপি’ও বলা যায়।
Advertisement
প্লাজমা থেরাপির ইতিহাস: কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি কিন্তু একেবারেই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। অষ্টাদশ খ্রিষ্টাব্দে এ চিকিৎসাপদ্ধতির প্রচলন হয়। ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম ডিপথেরিয়া রোগের চিকিৎসা দিয়েই এ পদ্ধতির গোড়াপত্তন হয়। শুরুর দিকে কোনো পশুকে আক্রান্ত করে সেটির শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হতো। পরে জটিলতার কারণে মানব শরীরের প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯২০ সালে এই প্লাজমা স্কারলেট ফিভার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত হুপিং কাশি রোগের চিকিৎসা এ প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমেই দেওয়া হয়। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় এই কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এরপর হাম, মাম্পস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলবসন্তের চিকিৎসায়ও প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়। যদিও ফলাফল ছিল মিশ্র প্রকৃতির।
নিকট অতীতে ২০০৩ সালে সার্স, ২০০৯ সালে বার্ড ফ্লু, ২০১২ সালে মার্স করোনাভাইরাস এবং অতি সম্প্রতি ২০১৩ সালে ইবোলা ভাইরাস চিকিৎসায় কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে।
এসইউ/এমকেএইচ
Advertisement