পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে বিষাক্ত রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন পদ্মার চরের ফসলের মাঠ, ঝোপ-ঝাড় এমনকি বসতবাড়িতেও দেখা মিলছে বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত এই সাপ।
Advertisement
কৃষকরা জানান, গত শনিবার (৩০ মে) রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের মাঝদিয়া বড়পাড়া গ্রামের সেলিনা খাতুন নিজ ঘরেই সাপের দংশনের শিকার হন। পরিবারের লোকজন আগ্রাসী প্রকৃতির সাপটিকে মেরে রোগীর সঙ্গেই নিয়ে আসেন হাসপাতালে। চিকিৎসকরা প্রথমে সাপটিকে চিনতে না পারলেও পরিবেশবিদদের সহায়তায় নিশ্চিত হন সাপটি রাসেল ভাইপার।
তবে কামড়ালেও সেলিনার শরীরে বিষ প্রয়োগ করতে পারেনি বলেই ধারণা চিকিৎসকদের। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সেলিনা।
এ ঘটনার পরে পাবনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সোমবার সকালে পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের কমরপুর বিস্তীর্ণ পদ্মার চরাঞ্চল পরিদর্শনে যান প্রশাসনের ৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল। সেখানে নদী পার হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
Advertisement
স্থানীয় কৃষক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, চরে নতুন নতুন পোকা-মাকড়সহ বিভিন্ন জাতের সাপের দেখা মিলছে। গত বছর বিষধর পোকা দেখা দিয়েছিল এবার সাপের দেখা মিলছে। সম্প্রতি এই চরে কাজে এসে বেশ কয়েকজন সাপের কামড়ের শিকার হয়েছে বলে জানান তারা।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ বলেন, গত একমাসের মধ্যে সদর ও সুজানগর উপজেলার পদ্মার চরগুলোতে একাধিকবার দেখা মিলেছে বিশ্বে বিষাক্ততায় পঞ্চম ও ক্ষীপ্রতার তালিকায় প্রথমে থাকা এই সাপটির। বর্ষা মৌসুমে আশপাশের লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই বিষাক্ত সাপ। তাই চরাঞ্চলগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই সাপের বিষের প্রতিশেধক নেই বললেই চলে। তাই সাবধানে কাজ করতে হবে।
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই সাপের কথা শুনে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চরাঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েকবার পরিদর্শনে গিয়েছি। আমাদের চোখে এখনও পড়েনি ওই সাপটি। তবে বেশ কিছু মানুষ এই সাপের কামড়ের শিকার হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এই সাপ খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে ও অন্যান্য সাপের থেকে দ্রুত বংশ বিস্তার করে। চরাঞ্চলের কৃষদের সাবধানে কাজ করতে হবে।
পাবনা জেলা প্রশাসনের পরিদর্শন দলের প্রধান সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, পদ্মার এই বিশাল চরাঞ্চল ফসলসহ গো বিচরণের অন্যতম স্থান। শুষ্ক মৌসুমে এই চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। গত বছর এই চরে বিষাক্ত বিছা পোকা দেখা দিয়েছিল। এবার বিষাক্ত সাপের কথা শোনা যাচ্ছে। কৃষকদের সাবধানে ও সতর্কতার সঙ্গে গামবুট পরে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চর অঞ্চলের কৃষকদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
Advertisement
পরিদর্শন টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সদর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল করিম ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমানসহ প্রমুখ।
পরিদর্শন টিম সদস্য আব্দুল করিম জানান, তারা পরিদর্শনকালে কোনো সাপের সন্ধান পাননি। তবে একাধিক কৃষক জানিয়েছেন তারা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সাপ দেখতে পান। এজন্য তারা চরে কাজকর্ম করতে ভয় পাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, কৃষকদের মুখে শুনে একটি টিম চরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্ত তারা সাপ দেখতে পায়নি। তারপরও সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
একে জামান/এফএ/জেআইএম