দেশজুড়ে

কবর খোঁড়ার কোদালও দিলো না গ্রামবাসী, নদীর তীরে লাশ দাফন

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া নাসিমা বেগম (২৫) নামে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকের মরদেহ দাফনে বাধা দিয়েছে গ্রামবাসী।

Advertisement

গ্রামবাসীর বাধার মুখে অবশেষে সোমবার (০১ জুন) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার তাজপুর গ্রামের ছোট যমুনা নদীর তীরে ওই নারীকে দাফন করে পুলিশ। নাসিমা বেগম তাজপুর গ্রামের মাসুদ আলীর মেয়ে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন নাসিমা বেগম। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন তিনি। এরপর জ্বর ও সর্দি নিয়ে ২৩ মে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে রোববার (৩১ মে) দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নেয়া হয়।

অবস্থার অবনতি হতে থাকলে রাত সাড়ে ৮টায় বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। সেখানে রাত সাড়ে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাসিমা বেগমের মৃত্যু হয়। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় তার।

Advertisement

এদিকে, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় নাসিমার মরদেহ গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়। ওই দিন রাত ৩টার দিকে তার মরদেহ গ্রামে নিয়ে আসা হলে বাধা দেয় গ্রামবাসী। পরে পুলিশের সহযোগিতায় মরদেহ গ্রামে আনা হলেও কবর দেয়ার জায়গা দেয়া হয়নি।

পরে বদলগাছী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় তাজপুর গ্রামের ছোট যমুনা নদীর তীরে বাঁধের পাশে নাসিমাকে দাফন করা হয়। জানাজা পড়ান উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম আইয়ুব আলী।

পুলিশের এসআই আরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসী বাধা দিয়েছিল। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমরা। গ্রামে কোনো কবরস্থান নেই। এমনকি মৃতের বাবার বাড়িভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। মামার জায়গা থাকলেও দেননি তিনি। কেউ জায়গা দিতে রাজি না হওয়ায় আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে জায়গা কিনে নেয়ার জন্য গ্রামবাসীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকাবাসী রাজি হয়নি। এরপর বিকল্প জায়গা হিসেবে সরকারি জমিতে কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কবর খুঁড়তে কোদাল ও সরঞ্জাম দেয়নি গ্রামবাসী। অবশেষে নদীর পাশে তাকে কবর দিয়েছি আমরা।

বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইদুর ইসলাম কেটু বলেন, ওই তরুণী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তার করোনার বিষয় গ্রামের কেউ জানতেন না। এমনকি তার আত্মীয়-স্বজনও না। রাতেই তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলেছি। স্বজনরা তাদের পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করতে দেয়নি। পরে সরকারি জায়গায় তাকে দাফন করা হয়।

Advertisement

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির বলেন, ওই নারী দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় থাকতেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তার। পরীক্ষার পর ফলাফল জানা যাবে। তবে পারিবারিক এবং সরকারি কোনো কবরস্থান না থাকায় পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজনের মাধ্যমে সরকারি জায়গায় তাকে দাফন করা হয়।

আব্বাস আলী/এএম/এমএস