জাতীয়

বাজেট অধিবেশন : করোনা প্রতিরোধে থাকছে কঠোর বিধিনিষেধ

>> প্রধানমন্ত্রীর সংস্পর্শে যেতে লাগবে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট>> সর্বনিম্ন সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ নিয়ে অধিবেশনের কাজ পরিচালনা>> সংসদ চলাকালীন দর্শনার্থী প্রবেশ নিরৎসাহিত করা>> তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা

Advertisement

আগামী ১০ জুন শুরু হচ্ছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। বাজেট অধিবেশন ঘিরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনেকগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিবেশন চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সংস্পর্শে আসতে পারেন এমন ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ রেজাল্ট থাকতে হবে। পরীক্ষার পর থেকে তাদের কোয়ারেন্টাইনেও থাকতে হবে। থাকছে আরও কঠোর বিধিনিষেধ।তবে, এবারের বাজেট অধিবেশনে সংসদ ভবনে উপস্থিত হয়ে কাভারেজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না সাংবাদিকরা।  করোনাভাইরাসের কারণে তাদের সংসদ টেলিভিশন দেখে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বলেছে সংসদ সচিবালয়।

Advertisement

আগামী ১০ জুন থেকে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। অধিবেশন শুরুর পরের দিন অর্থাৎ ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন হবে। এট পাস হবে ৩০ জুন।

সংসদের একাধিক সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, বাজেট অধিবেশন চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এর কার্যদিবস হতে পারে মাত্রে সাতটি। করোনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনটি মুলতবি রেখে স্বল্প সময় চালানো হবে। এই অধিবেশনের মাধ্যমে যাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ সংসদের কাছে ১২টি প্রস্তাব দিয়েছে। সংসদের ডেপুটি স্পিকারের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, এই অধিবেশনের মাধ্যমে যাতে করোনাভাইরাস না ছড়ায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের ১২টি সুপারিশ বা প্রস্তাব পেয়েছি। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে প্রেরিত ১৩ দফা সুপারিশমালাও আমাদের কাছে আছে। সেগুলোও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রেরিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, “উক্ত অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংসদ সদস্যরা যোগদান করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিবেশন চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

Advertisement

>> সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সর্বনিম্ন সংখ্যক ব্যক্তিবর্গকে অধিবেশনের কাজে নিয়োজিত করা।

>> সংসদ অধিবেশন চলাকালীন যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের চিহ্নিত করা।

>> চিহ্নিত ব্যক্তিবর্গের কোভিড-১৯ পরীক্ষার মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত নয় তা নিশ্চিত করা।

>> পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত সুস্থ ব্যক্তিবর্গের জন্য অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন অবস্থান নিশ্চিত করা।

>> সংসদ অধিবেশনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ যেন বহিরাগত বা অপ্রয়োজনীয় দর্শনার্থীর সাথে মেলামেশা করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।

>> সংসদ চলাকালীন দর্শনার্থী প্রবেশ নিরৎসাহিত করা।

>> সীমিতসংখ্যক সংবাদকর্মীদের নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে করোনা আক্রান্ত নয়- নিশ্চিত হয়ে নিয়োজিত করা।

>> তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।

>> সংসদ অধিবেশন কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ব্যতীত অন্যান্য ব্যক্তিদের সংসদ চলাকালীন সংসদে গমনাগমন নিরুৎসাহিত করা।

>> সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত গানম্যান, সহকারী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ সকলকে সংসদ ভবনে গমনাগমনে নিরুৎসাহিত করা।

>> সংসদ সদস্যদের বহনকারী যানবাহনসমূহ নিরাপদ দূরত্বে পার্কিং নিশ্চিত করা।

>> সংসদ সদস্যদের গাড়িচালকদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

>> অধিবেশন শুরুর পূর্বে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সহায়তা প্রদানকারী সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কোভিড-১৯ পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থতা নিশ্চিত করা।

>> কোনো সদস্য বা ব্যক্তির অসুস্থতা সংক্রান্ত বিষয়াদি অত্র সংস্থাকে দ্রুত অবহিত করা।

>> সংসদে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সংসদ সদস্যরা যারা সরকার কর্তৃক ঘোষিত লকডাউন এলাকায় বসবাস করছেন, তাদের সংসদে গমনাগমন রহিত করা।

>> স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা।

>> নিয়মিতভাবে সংসদ সচিবালয়ের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্যাদি অত্র সংস্থায় প্রেরণ করা।”

সংসদের আইন শাখা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের বাজেট অধিবেশনের কার্যদিবস ছিল ২৫টি। ওই অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটসহ মোট বাজেটের আলোচনায় ২২৩ জন এমপি অংশ নেন। তারা মোট ৫৫ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট আলোচনা করেন। বাজেট পাস ছাড়াও এ অধিবেশনে ১৪টি বিল পাস হয়।

২০১৯ সালের বাজেট অধিবেশন ২১ কার্যদিবস চলে। মোট ২৬৯ জন সংসদ সদস্য বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ৫৫ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট আলোচনা করেন। এর আগে এত এমপি এত সময় ধরে বাজেটের ওপর আলোচনা করার সুযোগ পাননি। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। এবার বিলও পাস হবে কম।

এ বিষয়ে সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যত দ্রুত সম্ভব অভিবেশন শেষ করার চেষ্টা করব। কিন্তু বাজেট অধিবেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। তাই আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এইচএস/এমএআর/এমএস