বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মালিকদের স্বার্থে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।’
Advertisement
সোমবার (১ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অমানবিক কাজ করা হয়েছে। আর এমনিতেই মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাসে কারা ওঠে? কম আয়ের সাধারণ মানুষেরাই বাসে ওঠে। তাদের বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিল। কার স্বার্থে বাড়িয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘মালিকদের স্বার্থে বাড়িয়েছে। মালিকদেরকে আবার প্রণোদনা, অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য। শুধুমাত্র দুর্নীতির চরমভাবে সুযোগ নিচ্ছে সবাই।’
Advertisement
গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনি দেখুন না, এখনও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট অনুমোদন পায়নি। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি, এই কিট নিয়েও বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। মানুষের এ দুর্দিনে যারা মানুষের স্বাস্থ্যকে, জীবনকে পুঁজি করে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দেয় সেই সরকারকে কি আমরা দুর্নীতিমুক্ত বলতে পারব? পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাই আশা করব, তারা (সরকার) ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করবেন।’
করোনাভাইরাসের কারণে কৃষি ও কৃষকদের নাজুক-দুর্বিসহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
এসবের মধ্যে আছে- আগামী একবছর পোল্ট্রি ও ডেইরিসহ সকল ধরনের কৃষি ঋণের কিস্তি সুদসহ মওকুফ। বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও ভর্তুকিসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ। কৃষিপণ্যসহ আম, লিচু কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি ফল সরকারি উদ্যোগে বাজারজাত নিশ্চিতকরণ। কৃষকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি। কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে কমপক্ষে তিন মাসের সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান। কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণ ও কৃষকদের ওপরে হয়রানি বন্ধ করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা।
Advertisement
বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
১০ জুন প্রতিটি জেলায় প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে চলতি মৌসুমে বোরো ধান ক্রয়ের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ, আর্থিক ও পরিবহন সঙ্কটে যেসকল কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না তাদেরকে কৃষকদল থেকে সহায়তা প্রদান এবং প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে চলমান ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথাও জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের সিদ্ধান্তগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত ছিল। যেমন ধরেন- কৃষির ব্যাপারে বলি, সবাই জানি কৃষি আমাদের মেরুদণ্ড। এই করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা কিন্তু এই কৃষি। অর্থাৎ এই কৃষিকে যদি আরও উজ্জীবিত করতে পারেন, উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারেন, কর্মসংস্থান সেখানে বাড়াতে পারেন তাহলে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। ওইদিকে কিন্তু দেখবেন সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে সেই প্রণোদনার মধ্যে কৃষি একেবারেই অবহেলিত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রয়াত শিল্পপতি আব্দুল মোনেম, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দ, শিক্ষাবিদ আবদুল কাদের ভুঁইয়াসহ করোনায় আক্রান্ত নিহতদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ফখরুল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তার স্ত্রী শিরিন পারভিন হক, ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরী, প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান ও তার স্ত্রীসহ গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও চিকিৎসকের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, সদস্য মেহেদি হাসান পলাশ, অধ্যাপক শামসুর রহমান শামস, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এফআর/এমকেএইচ