অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা মানবদেহে চালানো হয়েছে। এখন এই পরীক্ষার ফলের অপেক্ষা করছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। অপেক্ষায় দিন পার করছেন ভ্যাকসিনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা; করোনা ভ্যাকসিন গবেষক দলের সদস্য ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চন্দ্রাবলী দত্ত তাদেরই একজন।
Advertisement
মানবজাতির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই ভ্যাকসিনের গবেষক দলের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন ভারতীয় এই বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে পারাটা অনেক গর্বের। এতে জড়িয়ে আছে পুরো মানবজাতির স্বার্থ। আমাদের ভ্যাকসিনটির দিকে পুরো মানবজাতি তাকিয়ে আছে। চন্দ্রাবলী দত্তের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি জেনার ইনস্টিটিউটের ক্লিনিক্যাল বায়োম্যানুফ্যাকচারিং স্থাপনায় কাজ করেন এই বিজ্ঞানী। এই ইনস্টিটিউটে অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে।
চন্দ্রাবলী বলেন, প্রাণঘাতী করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের এই ভ্যাকসিন রয়েছে পুরো বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
ভ্যাকসিনের মান নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থাপক ভারতীয় বংশোদ্ভূত চন্দ্রাবলী ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন, মানবদেহে পরীক্ষায় যাওয়ার আগে ভ্যাকসিনের সব স্তরের মান নিশ্চিত করাই তার কাজ। তিনি বলেন,আমরা সবাই আশা করছি, পরবর্তী ধাপে এটি কাজ করছে। পুরো বিশ্ব এই ভ্যাকসিনটির দিকে তাকিয়ে আছে।
Advertisement
এই প্রকল্পের অংশ হতে পারাটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের। কারণ এটি মানবিক এক স্বার্থ। আমরা অলাভজনক সংস্থা। ভ্যাকসিনটিকে সফল করার জন্য প্রত্যেকদিন অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে চলছি; যাতে মানুষের জীবন বাঁচানো যায়। এটি ব্যাপক পরিসরের দলগত প্রচেষ্টা। এর সফলতার জন্য প্রত্যেকে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছে।
ছোটবেলা থেকে প্রাণীবিদ্যা এবং গণিতে আগ্রহ থাকলে কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন চন্দ্রাবলী। নিজের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার ছোটবেলার বন্ধুরা নটিংহামে পড়াশোনা করেছে; তারাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ব্রিটেন এমন একটি জায়গা যেখানে নারী-পুরুষের সমানাধিকার রয়েছে। যে কারণে আমি ইউনিভার্সিটি অব লিডসে বায়োটেকে মাস্টার্স করেছি।
চন্দ্রাবলী বলেন, আমরা আমাদের জীবনে কখনও এ ধরনের মহামারি দেখিনি। আমরা এগুলো শুধু ইতিহাসেই পড়েছি। কিন্তু একুশ শতকে এসে এ ধরনের একটি প্রকৃত মহামারি দেখতে হবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি; যে মহামারি আমাদের মাসের পর মাস ঘরবন্দি করে রেখেছে। আমাদের এখন প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং জীবন বাঁচানো।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়া নতুন করোনাভাইরাস এখন বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে। সংক্রমণের সংখ্যা ৬১ লাখ ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে ৩ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় অর্ধডজন ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।
Advertisement
তবে চীনের বিজ্ঞানীরা করোনার সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন চলতি বছরেই বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন।
এসআইএস/এমকেএইচ