তিস্তা পাড়ের হতদরিদ্র নারীরা পুরুষের পাশাপাশি মার্কেটে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এক সময় নারীরা সংসারের বোঝা হলেও এখন তারা বাজারে দোকান করে হয়ে উঠছে স্বাবলম্বী। এসব হতদরিদ্র নারীরা স্বপ্ন দেখে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে নিজের সংসার, সন্তান ও নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজের ইচ্ছেমত কেনাকাটা করবে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।আত্মবিশ্বাসী করে রুপান্তরিত নেতৃত্ব তৈরি ও নারী নেতৃত্ব দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে অক্সফার্মের অর্থায়নে পল্লীশ্রী এলএইচডিপি প্রকল্পটি তিস্তা পাড়ের হতদরিদ্র নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করে। দরিদ্র নারীরা তাদের সিবিওতে যখন সামাজিক মানচিত্র তৈরি করেছিল তখন এলাকার স্থায়ী কিছু সম্পদের মধ্যে কলোনি বাজারের মহিলা মার্কেটটিকে তাদের মানচিত্রে নিয়ে আসে। কিন্তু এই মার্কেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এমন সময় নারী নেতাদের সঙ্গে কলোনি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান বলেন, মহিলা মার্কেটে দোকান করার মত কোনো নারী উদ্যোক্তা না থাকায় মার্কেটটি এখনো চালু করা হয়নি। অনেক সদস্যই মহিলা মার্কেটে দোকান করতে আগ্রহী। তখন আগ্রহীদের তালিকা তৈরি করা হয় এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হয়। পরিবারের সদস্যদের মার্কেটে ব্যবসা করার সুবিধা বুঝালে তারা মহিলা মার্কেটে দোকান নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। মহিলা মার্কেটে দোকান করার ৩৮টি আবেদন জমা পড়ে। তার মধ্যে নারী ক্লাবের দলের নারী উদ্যোক্তা ৩৫ জন, বাইরের ৩ জন। বাজার কমিটি আবেদনপত্র যাচাই বাছাই করে ১৭ টি আবেদন বৈধ করেন। মহিলা মাকের্টে দোকান ঘর ১২ টি আবেদন করে ৩৮ জন নারী উদ্যোক্তা। নিরপেক্ষভাবে লটারির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়।দোকান বরাদ্দ পেয়ে নারী উদ্যোক্তারা জানায় , আমরা অনেক খুশি কারণ দোকান করার মত কোনো নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। এখন আমাদের ব্যবসার একটি নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি হয়েছে। আগে এ এলাকার কোনো নারী বাজারে দোকান করত না। আমরাই প্রথম নারী যারা বাজারে দোকান নিয়ে ব্যবসা করছি।মহিলা মার্কেটে নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে সেলিনা বেগম (সেলিম ট্রের্ডাস সার, বীজ, কীটনাশক ), আরিফা বেগম (ইয়ামিন গার্মেন্টস), আলেয়া বেগম (আলেয়া মুড়িঘর), শিরিনা বেগম (শিরিনা ট্রেডার্স মসলা জাতীয় পণ্য), নুপুর বেগম (নুপুর সেলাই ঘর কাপড় বিক্রি ও সেলাই), জয়নব বেগম (জয়নব ভ্যারাইটি স্টোর মুদির দোকান), হালিমা বেগম (হালিমা ট্রের্ডাস ইলেকট্রনিক্স), আফেজা বেগম (আফেজা চাউল ঘর), লায়লা বেগম (লায়লা সবজি ঘর), ভারতী রানী (পাপড়ি সু স্টোর), লিপি বেগম (রানী টেলিকম অ্যান্ড স্ট্রেশনারি কম্পিউটার), তসলিমা বেগম (তসলিমা ওয়াশিং ও লন্ডি ঘর)। সদস্যরা উক্ত ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিজের তহবিল থেকে দোকান নেয়ার যাবতীয় খরচ ব্যয় করে এবং ব্যবসার ধরন অনুযায়ী পুঁজি বিনিয়োগ করে। বাজারে ব্যবসা করার মত তাদের যথেষ্ট পুঁজি না থাকায় তারা মহিলা মার্কেটের নামে একটি অ্যাকাউন্ট করে সদস্যরা পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের কাছে অর্থ সহায়তার জন্য আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের সহায়তার ফান্ড থেকে মহিলা দোকানদারদের ব্যবসার ধরন বিবেচনা করে ১১ জনকে দুই লাখ ষোল হাজার টাকা মহিলা মার্কেটের অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে প্রদান করে। তসলিমা বেগমকে তার ব্যবসাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার পাশাপাশি নারীদের পারিবারিক কাজের চাপ কমানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তির ওয়াশিং মেশিন প্রদান করেন।ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার পুঁজি দিয়ে মালামাল ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে পাইকারি মূল্যে মালামাল ক্রয় করছে এবং মার্কেটে তা বিক্রি করছে। বাজারের মধ্যে তাদের দোকানে বেচাকেনা ভালই চলছে। এলাকার মানুষ আগ্রহী হয়ে কেনাকাটার জন্য মহিলা মার্কেটে আসছে। নারীরা মার্কেটে দোকান করতে আসলে তাদের পারিবারিক কাজের চাপ যেন না হয় সেজন্য পরিবারের স্বামীসহ অন্যান্য সদস্যরা পরিবারের রান্নাসহ যাবতীয় কাজ ভাগাভাগি করে এবং তাদের ব্যবসা করতে উৎসাহিত করে। নারীরা সহজেই দোকানে এসে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।মহিলা মার্কেটের দোকানদাররা আশা করেন, পুরো বাজার মিলে মাত্র ১২জন নারী দোকান করছে। একদিন যেন বাজারের অধিকাংশ দোকানেই নারীরা দোকান পরিচালনা করে। কলোনি বাজারে নয় অন্যান্য বাজারের যে মহিলা মার্কেটগুলো রয়েছে সেগুলো নারী ব্যবসায়ীদের নামে বরাদ্দের দাবী করনে তারা। মহিলা মার্কেট পরিচালনার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। কমিটির সভা প্রধান ও সার ব্যবসায়ী দোকানদার সেলিনা বেগম জানায়, আমরা মহিলা মার্কেটটিকে একটি মডেল তৈরি করতে চাই। এখান থেকে দেখে যেন মানুষ বুঝতে পারে যে, নারীরা কোনভাবেই দূর্বল নয়, সুযোগ পেলে তারা অনেক ভাল কাজ করতে পারে। নারী ক্লাবের মাধ্যমে আমরা তথ্য সম্বৃদ্ধ হয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। আমরা পরিবারে ও সমাজে এখন সম্মান পাই, সিদ্ধান্ত দিতে পারি। পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান জাগো নিউজকে বলেন, মহিলা মার্কেটটি চালু করাতে পল্লীশ্রী যে ভূমিকা পালন করেছে তা প্রশংসনীয়। তিনি আরো বলেন, মহিলা মার্কেটটি উন্নয়নের জন্য ভবিষ্যতে কমিটির মাধ্যমে মার্কেটের পাশে আরো নারীদের ব্যবসা করার জন্য দোকান তৈরি করে দিব। পল্লীশ্রী এলএইচডিপি প্রকল্পের সমন্বয়কারী ফৌজিয়া ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা পাড়ের নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হওয়ায় পাশাপশি এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। ছাতনাই কলোনি হাটের পাশাপাশি ডিমলার ১৬টি হাটের মহিলা মার্কেটগুলো হতদরিদ্র নারীদের হস্তান্তর করতে পারলে নারীরা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করতে পারত।এসএস/পিআর
Advertisement