করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ও শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১১টি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য এসব বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
শনিবার (৩০ মে) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আজ রোববার (৩১ মে) থেকে উচ্চ আদালত হাইকোর্টের বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে মিল রেখে গত ২৬ মার্চ থেকে আদালতেও ছুটি শুরু হয়। সাধারণ ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। বাড়ে আদালতের ছুটিও। সর্বশেষ ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সরকার থেকে সীমিত আকারে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। এ হিসেবে সাধারণ ছুটি বাড়ছে না। আর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের আগের ঘোষণা অনুসারে আদালতে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদের শেষ হয় ৩০ মে। এ অবস্থায় দুই সপ্তাহের জন্য ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে হাইকোর্টে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ১১টি বেঞ্চ গঠন করা হলো।
Advertisement
অবশ্য সরকারঘোষিত ছুটি ও অবকাশকালে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ইতোপূর্বে প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের পৃথক চারটি বেঞ্চ গঠন করে দেন। পাশাপাশি চেম্বার বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে মনোনীত করা হয়।
সরকারঘোষিত ছুটি ও অবকাশকালে অধস্তন আদালতে শুধু জামিনসংক্রান্ত বিষয়গুলো তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আদালতের বিচার কার্যক্রম চলে আসছে।
হাইকোর্টের ১১টি বেঞ্চ গঠন
হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইসারের সংক্রমণ রোধে এবং শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ৩১ মে (রোববার) হতে ১৫ জুন (রোববার) পর্যন্ত আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ এবং এই কোর্ট কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিস ডাইরেকশন (ব্যবহারিক নির্দেশনা) অনুসরণ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি এসব বেঞ্চ গঠন করেছেন।
Advertisement
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন অতি জরুরি ভ্যাট, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স–সংক্রান্ত রিট মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতি জরুরি সব ধরনের ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ভ্যাট, কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স অর্থঋণ আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব প্রকার জরুরি রিট মোশন ও তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের বিষয়াদি ব্যতীত অতি জরুরি সব প্রকার ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিন আবেদন গ্রহণ করবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের পৃথক বেঞ্চ।
ভ্যাট, কাস্টমস ও ইনকাম ট্যাক্স ব্যতীত অতি জরুরি সব প্রকার রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন বিচারপতি জে বি এম হাসান।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার অতি জরুরি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং আইন এবং দুদক আইন–সংক্রান্ত সব প্রকার ফৌজদারি ও রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের আওতাধীন বিষয়াদি ব্যতীত অতি জরুরি সব প্রকার ফৌজদারি মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।
অতি জরুরি সকল প্রকার দেওয়ানি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার আদিম অধিক্ষেত্রাধীন অতি জরুরি বিষয়, সাকশেসন আইন, বিবাহবিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী মোকদ্দমা, প্রাইজ কোর্ট বিষয়সহ অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও সালিশ আইনসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র গ্রহণ ও আপিল শুনানি গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান অতি জরুরি অর্থঋণ আইন–সংক্রান্ত রিট, দেউলিয়া বিষয়াদি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থঋণ আইন হতে উদ্ভূত রিট মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন।
হাইকোর্টের এই ১১টি বেঞ্চে আবেদন করার জন্য পৃথক ই–মেইল ঠিকানাও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভার্চুয়াল কোর্ট নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ শিরোনামে ৯ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়।
অধ্যাদেশ জারির পর আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল কোর্টের জন্য পৃথক প্র্যাকটিস ডাইরেকশন, আইনজীবীদের জন্য আমার আদালত (ভার্চুয়াল কোর্টরুম ব্যবহার) ম্যানুয়াল, অধস্তন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয়াদি ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
প্র্যাকটিস ডাইরেকশনসহ ম্যানুয়ালে ব্যবহারিক দিকনির্দেশনাও রয়েছে।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর