মতামত

যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও

যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও- বন্ধুর এমন মধুর আহ্বান উপেক্ষা করেছে কে কবে? পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মধুর, আবেগের এবং একইসাথে জটিল একটা সম্পর্ক হচ্ছে বন্ধুত্ব। এ হচ্ছে আত্মার শক্তিশালী বন্ধন যার সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ, ভালোবাসা এবং ভরসা। বন্ধুহীন জীবন অনেকটা পালহীন নৌকার মতো। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়ন করতে এপিজে আবদুল কালাম বলেছেন, ‘একটি বই একশটি বন্ধুর সমান। কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান।’

Advertisement

বন্ধু আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটা এমন এক সম্পর্ক যার কাছে নিজেকে মেলে ধরা যায় নিখুঁতভাবে। একজন অন্যজনের ভালো, মন্দ, দোষ সবটা জেনেই তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। চার্লস ল্যাম্ব বলেছেন, ‘একজন সত্যিকারের বন্ধু কখনোই বন্ধুর আচরণে ক্ষুব্ধ হয় না।’

বন্ধুত্ব আমাদের বিশ্বাস করতে শেখায়। পরিবারের বাবা-মাকেও যে কথাটি বলা যায় না বন্ধুকে বলে দেয়া যায় অনায়েসে। জীবনের নানা দুঃসময়ে বন্ধুই আমাদের পাশে থাকে। মন খারাপ? বন্ধুর সাথে কফিশপে অথবা চায়ের দোকানে চা খেয়েই অশান্ত মনটি চাঙা হয়ে যায় বেশ খানিকটা। জীবনে বন্ধু না থাকলে ‘বন্ধুর’ পথ চলাটা সহজ হতো না মোটেও। প্রাণ খুলে কাঁদতে চান? বন্ধুর কাঁধ তো রয়েছেই, নিজের সকল আবেগ ঢেলে দিন না বন্ধুর বুকেই। সে ভ্রু কুঁচকাবে না মোটেও।

আর বন্ধুত্বের এমনি এক বিশাল প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছে ক্লাব-৯৪। সারাদেশের ১৯৯৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একঝাঁক সক্রিয়, প্রাণবন্ত এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ শিক্ষার্থীকে নিয়ে এর যাত্রা শুরু গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর। আর এ আট মাসে ক্লাব ৯৪ এর সদস্যসংখ্যা ২০ হাজার ৩৩৫ জন। আর যার লিডারশিপ এবং যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে এ প্লাটফর্মটি গড়ে উঠেছে সে হচ্ছে, এই ক্লাবের প্রিয় মুখ সারোয়ার মোর্শেদ। সে জানে অজোপাড়া গায়ের এক বন্ধু এবং ডাকসাইটে সেলেব্রটি বন্ধুটির মন কী করে জয় করতে হয়।

Advertisement

কোভিড-১৯ আমাদের জীবন থেকে এরই মধ্যে অনেকগুলো উৎসব কেড়ে নিয়েছে। বৈশাখ কেটেছে রঙহীন, ঈদ তেমনি ছন্দহীন। ঘরবন্দি জীবনে ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে অনলাইনে ব্যতিক্রম এক আড্ডা আয়োজন করে ‘ক্লাব ৯৪’। ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা পাঁচদিন সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ২টা পর্যন্ত গানে কবিতায় মাতিয়ে রেখেছে দেশ-বিদেশের সকল ৯৪ এর বন্ধুকে। ক্লাবের বন্ধুদের সাথে যোগ দিয়েছেন এ ক্লাবেরই অন্যতম সদস্য নির্মাতা অনিমেষ আইচ, অভিনেত্রী দীপা খন্দকারসহ আরও অনেকেই।

ক্লাব-৯৪ গঠনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে অ্যাডমিন সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘ক্লাবের সকল সদস্যকে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নসাধন করা। সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট মেম্বার এনগেজমেন্ট প্রোগ্রাম- এসডিইপি এই প্লাটফর্মের লক্ষ্য কেবল শুধু বন্ধুত্ব, মজা এবং সাহচর্যের জন্য নয় বরং সমাজের সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া। এছাড়াও সকল সদস্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন করা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের সময় সুচিন্তিত এবং মূল্যবান পরামর্শ ও সুপারিশ চাওয়া, তহবিল সংগ্রহ (সত্যিকারের প্রয়োজনের জন্য), এসডিইপির অধীনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যার যার অবস্থানে থেকে, সদস্যদের নিজ নিজ সক্ষমতা অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব সদস্যদের একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করা।

সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম (এসডিপি):

# যেকোনো উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষরোপণ# গভীর নলকূপ স্থাপন বা অন্য কোনো মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা# মহিলাদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা# শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম মানুষদের হুইলচেয়ার বিতরণ (গ্রুপের একজন সদস্য থেকে প্রাপ্ত ধারণা)# শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান অর্থাৎ আমাদের এখানে এমন অনেক ৯৪ইয়ানস আছেন যারা মারা গেছেন এবং তাদের এমন শিশু রয়েছে যাদের শিক্ষাগত সহায়তা প্রয়োজন।# রক্তদান কর্মসূচি গ্রহণ# দাঁতের চিকিৎসা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি# ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প# চক্ষুশিবিরের আয়োজন

Advertisement

আমরা আরও অনেক কিছুই করতে পারি তবে উপরে উল্লিখিত কর্মসূচিগুলো আমাদের কাছে বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছি।’

এরই মধ্যে কোভিড-১৯ সচেতনতামূলক বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শ, অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে ক্লাব মেম্বারদের সংযোগ স্থাপন, রক্তদান ও ক্লাব মেম্বারদের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল মেম্বারদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নিয়মিত কোভিড-১৯ নিয়ে নানান তথ্য আপডেট দেয়া হচ্ছে। এ যেন অনেকগুলো সমমনা মানুষের অপূর্ব এক মেলবন্ধন। তবুও বৃহতাকারে কোনো কাজ করতে গেলে খানিক ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে ক্লাব ৯৪ হয়ে উঠুক বন্ধুত্বের এক মহৎ নিদর্শন।

আমি নিজে এ ক্লাবের একজন ক্ষুদ্র সদস্য হতে পেরে গর্বিত। গ্রুপের অ্যাডমিনের সাথে আছে একদল উদ্যমী মডারেটর টিম। ধন্যবাদ সেই টিম মেম্বার আফসানা জাবিন, শারমিন মন, কিশোয়ার আমিন, লেলিন খান ও কামরুল ইসলামকে।

ক্লাব বন্ধুদের প্রতি আহ্বান, চলো সবাই মিলে এই ক্লাব-৯৪ কে আমাদের সকল ৯৪ ইয়ানসদের জন্য গর্ব এবং অহংকার করার মতো একটি প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলি। বন্ধুত্ব উদযাপন করি প্রতিটা দিন প্রতিটা সময়। ক্লাব-৯৪ এবং ক্লাবের সকল ৯৪ইয়ানস সদস্য দীর্ঘজীবী হোক, চিয়ার্স ........!

লেখক : সম্পাদক, লুক।

এইচআর/বিএ/পিআর