গণপরিবহন নিয়ে জনভোগান্তি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার যেটা হলো সেটা যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব ধরনের বাস-মিনিবাসে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা বলে ৮০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে যাত্রীদের ব্যয় বাড়বে কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষা কতটা হবে সেটি নিশ্চিত নয়। এ জন্য যাত্রীস্বার্থ নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি।
Advertisement
অস্বাভাবিক বাসভাড়া বৃদ্ধিতে সঙ্গত কারণেই উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। ভাড়া বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদও জানিয়েছে সংগঠনগুলো। গতকাল শনিবার (৩০ মে) বিবৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানানো হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় কর্মহীন মানুষ এমনিতেই আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সেখানে বর্ধিত বাসভাড়া আদায়ের অনুমতি দেয়া হলে এটা হবে সড়কে ডাকাতির শামিল। কারণ বাস মালিক-শ্রমিকরা কোনো সময় সরকারের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় না করে যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করে থাকেন।
গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিসি) সভাপতি নুরুর রহমান সেলিম, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া এবং শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) সভাপতি আশীষ কুমার দে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর কৌশল হিসেবে সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধির গেজেট প্রকাশের পরই মালিকরা এ শর্ত বেমালুম ভুলে যাবেন। এছাড়া নগর পরিবহন বাসে তো এ নিয়ম মানাই হবে না।
Advertisement
এছাড়া নেতৃবৃন্দ গণপরিবহন সংকট নিরসন ও বেসরকারি বাসমালিক ও শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিপীড়ন থেকে সাধারণ জনগণকে সারাদেশে বিআরটিসির সেবার পরিধি ও মান বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে কর্ম হারিয়ে নিদারুণ আর্থিক সংকটে থাকা জনগণের ওপর বর্ধিত ভাড়া চাপিয়ে দেয়া হলে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র শামিল।
তারা বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের যে চিত্র তাতে যাত্রীবাহী গণপরিবহন হয় লকডাউন করতে হবে, নয় তো পুরোপুরি চালু করতে হবে। আংশিক বা সীমিত আকারে চালু করে কোনো লাভ হবে না। কারণ যাত্রীর চাপ এবং চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে সরকারের সীমিত আকারে গণপরিবহন চালুর উদ্যোগ ব্যর্থ হবে, মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
গণপরিবহন নিয়ে মানুষজনের ভোগান্তির কথা কেউ ভাবেনি। বরাবরই যাত্রীস্বার্থ থেকেছে উপেক্ষিত। কাঙিক্ষত সেবা পাওয়া না গেলেও যাত্রীদের পকেট কাটা হয় ঠিকই। সিটিংয়ের নামে চিটিং। পরিবহনের মান খারাপ। নানা অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
মরণঘাতী করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে। গণপরিবহনে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয় ভাইরাসের বিস্তারে সেটি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যেখানে মজ্জাগত হয়ে গেছে- সেখানে পরিবহন মালিকরা যে আইন মানবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়?
মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যাত্রী কিংবা পরিবহন সংশ্লিষ্ট কেউ কিন্তু রক্ষা পাবেন না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং যাত্রীস্বার্থ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
এইচআর/বিএ/পিআর