সিলেট জেলায় শনিবার একদিনেই ৭৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন চিকিৎসক, ১১ জন পুলিশ, র্যাব-৯ এর আট সদস্য, একজন ইউপি চেয়ারম্যান, শিশু ও উপজেলা প্রকৌশলীও রয়েছেন।
Advertisement
শনিবার (৩০ মে) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর ফলাফলে তাদের করোনা শনাক্ত হয়।
এরমধ্যে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসি-আর ল্যাবে ১৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে ১২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জনের করোনা ধরা পড়ে।
রাতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় জানান, শনিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয় এরমধ্যে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
Advertisement
আক্রান্তদের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৮ র্যাব সদস্যসহ ১৯ জন, একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৮ জন, বিশ্বনাথের ৮ পুলিশ সদস্য, জকিগঞ্জে ১৪ জন, জৈন্তাপুরে ৩ জন এবং বিয়ানীবাজারের একজন বলে জানা গেছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল ফারুক জয় জানান, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ১২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৫ করোনা শনাক্ত হয়েছে।
জানা গেছে, শাবির ল্যাবে আক্রান্তদের জকিগঞ্জর ৪ জন, কানাইঘাটের ১১ জন, গোলাপগঞ্জের দুইজন, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের দুইজন, তিন পুলিশ সদস্য ও সিলেট নগরের বাসিন্দা ৩ জন।
এদিকে, জকিগঞ্জ উপজেলায় এক ইউপি চেয়ারম্যান ও একই পরিবারের ৯ জনসহ মোট ১৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্ত হওয়া সবার শরীরেই করোনা উপসর্গ রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও স্বাস্থ্য সহকারী রয়েছেন। শনিবার রাত ১২টায় জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
Advertisement
আক্রান্তদের মধ্যে একই পরিবারের ৯ জন হলেন, জকিগঞ্জ পৌর এলাকার আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা শিহাব উদ্দিন (৩৮), তার ভাই ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (৫২), তাদের পরিবারের সদস্য খালেদা রহমান চৌধুরী (৩০), নাসিমা আক্তার (৩০), সমছুনন্নাহার (২২), কামরুন্নাহার (২০), সুমাইয়া (১৮), নাফিস (৪) ও জাকারিয়া (১২)।
এছাড়া বাকি আক্রান্তরা হলেন, কাজলসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলকারনাইন লস্কর (৬০), উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মনসুরুল হক, উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী হুমায়ুন আহমেদ (২৭), স্বাস্থ্য সহকারী আতাউর রহমান আজাদ (৫০) ও পীরেরচক গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম (২১)।
গত ২৮ মে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে সিলেটের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। শনিবার রাতে রিপোর্ট আসে পজিটিভ।
জকিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মো. আব্দুন নাসের জানান, নতুন শনাক্ত হওয়া সবার বাসা-বাড়ি লকডাউন করতে পুলিশ কাজ করছে। একদিনে জকিগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক অবস্থায় বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ওসি।
গত শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৪৬১ জন। শনিবার (৩০ মে) নতুন করে ৭৪ জন আক্রান্ত হওয়ায় এ জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৩৫ জনে। আর সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন ৯৪৮ জন।
সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলায় ১৪৪ জন, হবিগঞ্জে ১৭১ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮ জন। এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মারা গেছেন মোট ১৭ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় মারা গেছেন সবচেয়ে বেশি ১৩ জন। হবিগঞ্জে মারা গেছেন একজন আর মৌলভীবাজার জেলায় করোনায় মারা গেছেন ৩ জন। সুনামগঞ্জ জেলায় কেউ মারা যাননি। করোনা জয় করে সুস্থ হয়েছেন ২১৬ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৫৩, সুনামগঞ্জে ৬১, হবিগঞ্জে ৮৬, মৌলভীবাজারে ১৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০১ জন করোনা রোগী।
ছামির মাহমুদ/এমএএস/এসআর