দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের আরও এক সদস্য প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি করোনায় প্রাণ হারানো মোরশেদুল আলমের পুত্রবধূ ইশফাক আরা জাহান রাফিকা।
Advertisement
রাফিকা মৃত মোরশেদুল আলমের ছেলে মাহমুদুল আলম আকিবের স্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মেয়ে। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) রাতে রাফিকার করোনা শনাক্ত হয়।
এর আগে গত ২২ মে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বড় ভাই মোরশেদুল আলম। এছাড়া ভাইরাসটিতে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের মা-ছেলে, ভাই-ভাবিসহ পরিবারের আট সদস্য আক্রান্ত হন।
চট্টগ্রামের এলিট সোসাইটির এ পরিবারে কিভাবে করোনায় সংক্রমিত হলো এ নিয়ে শুরু থেকেই নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে এবার জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
Advertisement
জানা গেছে, চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশজুড়ে যখন লকডাউন চলছিল, তখন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মেয়ে জেবা জামান চৌধুরীর সঙ্গে এস আলম পরিবারের আরেক সন্তান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবুর ছেলে আতিকুল আলমের বাগদান সম্পন্ন হয়।
সরকারি নির্দেশনার কারণে আলোচিত এ বাগদান অনুষ্ঠানের কথা সাধারণ মানুষ না জানলেও আনু্ষ্ঠানিকতার কমতি ছিল না। নগরের সার্সন রোডে মন্ত্রীর বাসভবনে ঘরোয়া এ বাগদান অনুষ্ঠানে দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক লোকের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও ছিল।
সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এবং তার পরিবারের সবাই চট্টগ্রামের ধনিয়ালাপাড়াস্থ বায়তুশ শরফ দরবারের পীর মাওলানা কুতুব উদ্দিনের ভক্ত ও অনুসারী। এস আলম পরিবারের সদস্যরা যে কোনো শুভ কাজে পীর মাওলানা কুতুব উদ্দিনের দোয়া নিতেন। তাদের পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতেন। বাগদানের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা শাহ কুতুব উদ্দিন। তিনি মোনাজাতের মাধ্যমে বর-কনের দাম্পত্য জীবনে শান্তি কামনা করেন। বর-কনে পীরের পা ছুঁয়ে সালাম করেন, দোয়া নেন।
এ অনুষ্ঠানের পরপরই এস আলম পরিবারে ৯ সদস্য এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা শাহ কুতুব উদ্দিন করোনায় আক্রান্ত হন। পরে ২০ মে রাজধানীর ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাওলানা শাহ কুতুব উদ্দিনের মৃত্যু হয়।
Advertisement
একদিন পর ২২ মে রাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান এস আলমের বড় ভাই ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদুল আলম। ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এমপি দিদারের মেয়ে ও করোনায় মারা যাওয়া মোরশেদুল আলমের পুত্রবধূ ইশফাক আরা জাহান রাফিকাও ছিলেন।
তবে লকডাউনে সিঙ্গাপুরে আটকে থাকায় বিয়েতে উপস্থিত হতে পারেননি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ও তার স্ত্রী।
ওই বাগদান অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাইফুল আলম মাসুদের মা ৮৫ বছর বয়সী চেমন আরা বেগম, এস আলম গ্রুপের পরিচালক রাশেদুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু, পরিচালক মো. শহীদুল আলম, পরিচালক ওসমান গণি ও ৩৬ বছর বয়সী এক নারীসহ মোট ৯ সদস্য। তাদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকায় আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আবদুস সামাদ লাবু ও শহীদুল আলম সুস্থ
করোনা আক্রান্ত হয়ে এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর আক্রান্ত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের চার ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই করোনা মুক্ত হয়েছেন।
ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ছোট ভাই গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু এবং পরিচালক শহীদুল আলমের ফলোআপ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
শনিবার (৩০ মে) দুপুরে এ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানান, দ্বিতীয় দফার নমুনা পরীক্ষায় এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং অপর পরিচালকের নমুনা নেগেটিভ এসেছে। তারা করোনা মুক্ত হিসেবে আজ বা আগামীকালের মধ্যে ছাড়পত্র পেতে পারেন। তবে চেয়ারম্যানের মাসহ আরও দুই ভাই এখনও চিকিৎসাধীন।
আবু আজাদ/এএইচ/এমকেএইচ