দেশে প্রতিদিন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অনেকটা নিরাপদে ছিল বরগুনার তালতলী উপজেলাবাসী। দেশের সর্বত্র রোগী শনাক্ত হলেও এ উপজেলায় শুক্রবার (২৯ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়নি।
Advertisement
কিন্তু শুক্রবার রাতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী তালতলী উপজেলায় করোনাভাইরাসে প্রথম সংক্রমিত একজনকে শনাক্ত করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তিনি তালতলী উপজেলার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে একজন নার্স।
এদিকে তালতলী উপজেলা হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কোনো রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। এমনকি করোনাভাইরাসে সন্ধিগ্ধ হিসেবেও কেউ আইসোলেশনে ছিলেন না। তারপরও এই হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত এই নার্স কার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন তা খুঁজে বের করার অনুরোধ জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আক্রান্ত ওই নার্স বলেন, তালতলী হাসপাতালে দায়িত্বপালনরত অবস্থায় তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কোনো রোগীর সংস্পর্শে যাননি এবং এ ভাইরাসের আক্রান্ত কাউকে চিকিৎসাসেবাও দেননি। তারপরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি আমার বাসা থেকে হাপাতাল এবং হাসপাতাল থেকে বাসায় যাতায়াত করেছি। এর বাইরে আমি কোথাও বেড়াতে যাওয়া তো দূরের কথা, ঘুরতেও যাইনি।
‘গত ১৩ মে আমি অফিসের কাজের জন্য আমতলী উপজেলার এজি অফিস এবং সোনালী ব্যাংকে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি আমতলী হাসপাতালে যাই। তবে আমি হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করিনি। এর চারদিন পর গত ১৭ মে থেকে আমার প্রথমে মাথাব্যথা এবং পরে জ্বর আসে। এর সঙ্গে ধীরে ধীরে গলাব্যথার সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট।’
‘আমার এই অসুস্থতার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রকোপ শুরু হলে নমুনা দিতে একটু বিলম্ব হয়। আমি গত ২৩ মে তালতলী হাসপাতালে আমার নমুনা দেই। ২৯ মে রাতে আমার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।’
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি বাসায় আইসোলেশনে ছিলাম। আমার উপসর্গ চলে যাওয়ার পরও রিপোর্ট আসতে বিলম্ব হওয়ায় আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো আমার রিপোর্ট নেগেটিভ, তাই রিপোর্ট আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য আমি আমার পরিবারের সবার সঙ্গে মিশেছি। উপজেলা হাসপাতালে জনবল কম থাকায় গত ২৭ মে আমি এক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কখন, কীভাবে কার সংস্পর্শে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি বলতে পারছি না।
Advertisement
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ফাইজুর রহমান বলেন, আক্রান্ত ওই নার্সের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকেই আইসোলেশনে রাখা হয়। তবে তার উপসর্গ চলে যাওয়ার পর একবার তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। এজন্য আরেক নার্সকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ওই নার্স সংক্রমিত থাকা অবস্থায় হাসপাতালে এসে যে রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তিকেও আইসোলেশনে রাখার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সর্বদক্ষিণের সমুদ্র উপকূলীয় জেলা বরগুনার সমুদ্রতীরবর্তী উপজেলার তালতলীতে ওই নার্সই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তিনি কার সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন তা আমরা এখনও খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন দুজন। বাকিরা চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাক্তার হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, তালতলীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই নার্সের বাড়ি ইতোমধ্যেই লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া তালতলী উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত আরেক নার্সকে আইসোলেশন রাখা হয়েছে। তালতলী উপজেলায় প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী হিসেবে ওই নার্স কীভাবে সংক্রমিত হয়েছে তা আমরা এখনও বের করতে পারিনি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমএআর/জেআইএম