গণমাধ্যমকে ছয় দফা ‘নির্দেশনা’ দিয়ে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের নামে ইমেইল পাঠিয়ে যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাতে ভয় পাওয়ার যেমন কিছু নেই তেমনি হাল্কাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হালের এই জঙ্গি সংগঠনটি এরইমধ্যে বেশ ক’জন লেখককে হত্যা করেছে। ওইসব জঙ্গিদের কথা হল ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহ রসুল নিয়ে সমালোচনামূলক কোনোকিছু লেখা যাবে না। যেসব জঙ্গি ধরা পড়েছে তারা এতদিন এসব কথাই বলেছে।এবারই প্রথম দেখা গেল তাদের নামে ‘জেহাদবিরোধী’ সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলেছে নারীদের ঘরের বাইরে চাকরি করা ইসলামী শরিয়াহ মতে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের নারী কর্মীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো-ইসলামবিরোধী, নাস্তিক্যবাদী শক্তির কোনো প্রকার প্রচারণায় শামিল হওয়া যাবে না। পত্রিকার বিজ্ঞাপনে নারী মডেলের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। কোনো নারীর বেপর্দা ছবি পত্রিকায় ছাপানো যাবে না ইত্যাদি।বিদেশে অবস্থানরত নয়জন এবং দেশে বসবাসরত ছয়জন ব্লগারের নাম তুলে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, “যারা বিদেশে আছেন তাদের দেশে ফেরার সাথে সাথে আর যারা দেশের অভ্যন্তরে গা ঢাকা দিয়ে আছেন তাদের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে হত্যা করা হবে।”জঙ্গিদের নামে এই হুমকি পাওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, জঙ্গিদের কোনো ধরনের হুমকিতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। গণমাধ্যমও এই হুমকিকে খুব একটা আমলে নেয়নি। তারা এই হুমকি দাতারা আদৌ আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের কেউ কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছে। যদিও এ নিয়ে কেউ কোনো অনুসন্ধান করেনি। আমরা গত দুই বছর ধরে দেখে আসছি একের পর এক ওই জঙ্গি গোষ্ঠি মুক্তমনা লেখকদের হত্যা করে চলেছে। এমনকি তারা ঘোষণা দিয়েও হত্যা করছে। এবার রীতিমত তারা নির্দেশনা দিয়ে হুকুম জারি করেছে। আনসারউল্লাহ বাংলাটিম ওই হুমকিবার্তা পাঠিয়েছে কিনা তা নিয়ে কারো কারো সন্দেহ থাকলেও আমরা মনে করি ওই হুমকি যে-ই বা যারাই দিক না কেন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা উচিত। তারা যে হুমকি দিয়েছে তা একেবারে নতুন কিছু নয়, ২০০৩ সাল থেকেই জমিয়াতুল মুজাহেদিন বা জেএমবি একই রকম হুমকি দিয়ে আসছে। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি সরকারের কাছে জানিয়েছিল সেটিরও মূলকথা এমন ছিল। ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের ঘরে বন্দি রাখার কথা এদেশে জামাতে ইসলামিই প্রথম উচ্চারণ করে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত জামাতে ইসলামী প্রকাশ্যে নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছে। ৯১ এর নির্বাচনে বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দিয়ে দুটি নারী আসনও সংসদে জুটিয়েছিল জামাত।এসব ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ইসলাম ধর্মভিত্তিক সব আইনি ও বেআইনি সংগঠনই নারীদের ঘরে আটকে রাখতে চাইছে। আর সবগুলো জঙ্গি সংগঠন একই ভাষায় কথা বলছে। এইসব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যেসব সংগঠন নারীদের অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তার প্রত্যেকটিকে যদি নিষিদ্ধ করা না যায় তাহলে কোনো না কোনোভাবে ওই ধরনের হুমকি আসতেই থাকবে। সরকার যদি জামাতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট বা হেফাজতে ইসলামের নারী বিরোধী কর্মকাণ্ড আইন করে নিষিদ্ধ করে দিত তাহলে হয়ত ওইসব খুচরা জঙ্গি সংগঠন আজ এতদূর আসতে সাহস পেত না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা পুলিশ প্রধান যতোই বলেন না কেন ওইসব জঙ্গিদের কথায় ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, আমরাও মনে করি ভয় না পেয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু আশঙ্কা হল একের পর এক লেখকদের হত্যা করা হচ্ছে অথচ খুনিদের ধরা যাচ্ছে না। গোয়েন্দারা এ জায়গায় হতাশাজনক অগ্রগতি প্রতিবেদন দিচ্ছে। রাজধানীতে দিনে দুপুরে বিদেশি হত্যা করা হল এখন পর্যন্ত গোয়েন্দারা কোনো কূল কিনারা করতে পারল না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় ভরসা করার কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছি না।এইচআর/পিআর
Advertisement