ক্রিকেট মাঠে ভালো একটা ইনিংস কিংবা বড় কোন শিরোপা জেতাতে পারলেই সবার চোখে নায়ক হয়ে যান ক্রিকেটাররা। তবে সত্যিকারের নায়ক হওয়ার জন্য প্রভাব রাখতে হয় মানুষের জীবনে, এগিয়ে আসতে হয়ে মানুষের কল্যাণে। যারা এমনটা পারেন, তারা বড় ক্রিকেটার না হলেও, মানুষের চোখে নায়ক হয়ে থাকেন আজীবন।
Advertisement
তেমনই এক উদাহরণ হয়ে থাকলেন ভারতের মুম্বাইয়ের রঞ্জি ক্রিকেটার আকিব শেখ। খেলোয়াড়ি জীবনে তেমন কিছুই করতে পারেননি ২৯ বছর বয়সী আকিব। মাত্র ২০ বছর বয়সে রঞ্জি অভিষেক হয়েছিল ঠিক, কিন্তু সেই ম্যাচের পর আর সুযোগ পাননি কোন স্বীকৃত ম্যাচে। গত এক দশক ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার চেষ্টাই করে যাচ্ছেন তিনি।
খেলা দিয়ে মানুষের চোখে নায়ক হতে পারেননি তিনি। তবে গত বুধবার (২৭ মে) হয়েছেন সত্যিকারের নায়ক। আকিবের বসবাস মুম্বাই মেট্রোপলিটনের পশ্চিম কল্যাণ এলাকার চার্ম স্টারস ভবনে। আট তলা এ ভবনের ষষ্ঠ তলায় থাকেন আকিব।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠ তলায়ই লাগে ভয়াবহ আগুন। তখন সেখানে আটকে পড়ে যায় ৪০ জন মানুষ। দ্রুত কিছু না করলে সবার জীবন শঙ্কার মুখে পড়ে যেত। সে অবস্থায় নিজের কথা না ভেবে দুই প্রতিবেশি আদনান খান ও দানিশ খানকে নিয়ে সবাইকে বাঁচানোর মিশন শুরু করেন আকিব।
Advertisement
তাদের এই উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হয় একটি দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত মই। সেই মই দিয়ে এক এক করে ৪০ জন মানুষকে পাশের সুন্দ্রা প্লাজা ভবনের ছাদে স্থানান্তরিত করেন আকিব ও তার বন্ধুরা। পরে দমকল বাহিনী এসেও তাদের কাজের সাহায্য করেছে। সেদিনের ঘটনা জানিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ২৯ বছর বয়সী আকিব বলেন, ‘পুরোদিন বিদ্যুৎ ছিল না। সন্ধ্যায় সোয়া ছয়টার দিকে বিদ্যুৎ আসল, আমি আমার ফোন চার্জে দেই। তখন আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। হঠাৎ আমার মা এসে বলে যে, আগুন লেগেছে। আমি দরজা খুলে দেখি চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, কিছুই দেখতে পারছিলাম না।’
চতুর্থ তলার বাসিন্দা দানিশ খান আগুন লাগার সময় একদম নিচ তলায় ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘আগুন দেখে আমি আকিব এবং অন্যান্য কয়েকজন বন্ধুকে ফোন করি। আকিব ও আদনানকে নিয়ে আমরা কয়েকজন ছয় তলার গ্যালারি থেকে মানুষদের সুন্দ্রা প্লাজায় স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেই। স্বাভাবিকভাবেই মানুষজন তখন খুব ভয়ে ছিল। এটা অনেক বড় দুর্ঘটনা হতে পারতো। তবে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা সব বন্ধুরা এগিয়ে আসায় মানুষের প্রাণ বেঁচেছে।’
আকিব বলেন, ‘অত্যধিক ধোঁয়া এবং দম বন্ধ অবস্থার কারণে আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমার ৮০ বছর বয়সী দাদী, আমার মা- সবাই ঘরে ছিলেন। তবে সৌভাগ্যবশত সুন্দ্রা প্লাজার দূরত্ব ছিল মাত্র ৮ ফুট। যে কারণে তাদের সবাইকে সরিয়ে নিতে পেরেছি। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় কারও কোন বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।’
পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা এসে জানিয়েছে শর্ট সার্কিট থেকে এ আগুনের সুত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। আকিবের বাবা মবিন শেখ বলেছেন, ‘লকডাউনের মধ্যেও ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশের কর্মীরা যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
Advertisement
এসএএস/এমকেএইচ