করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যার হিসেবে চীনকে ছাড়িয়েছে স্পেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইউরোপের এই দেশটিতে। ২৪ ঘণ্টায় (২৯ মে) স্পেনে মৃত্যুবরণ করেছে ৩৮ জন। এর আগের দুইদিন ২৭ ও ২৮ মে মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৯ জন ও ৩৫ জন। স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ১২১ জন। আক্রান্ত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৪ জন।
Advertisement
২৯ মে নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১৮৭ জন, যা আগের দিনের (২৮ মে) আক্রান্তের সংখ্যা ৩ শতাংশ বেশি। আগের দুইদিন ২৮ ও ২৭ মে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮২ জন ও ২৩১ জন।
করোনা মহামারিতে স্পেনে যত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন তার ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধ। তাদের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। আর এ কারণে স্পেনে পেনশনে থাকা মানুষের সংখ্যা গত ৩ মাসে নজিরবিহীনভাবে কমে গিয়েছে। স্টেট অ্যালার্মের কারণে সেগুরো সোসিয়াল অফিস বন্ধের পর চলতি মে মাসে হিসেব করে দেখা গেছে গত তিন মাসে মূল সংখ্যা ৯৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৩৭ জন থেকে তিন মাসে ৩৮ হাজার ৫০৮ জন কমে গেছে।
তিন মাসের ব্যবধানে পেনশন ভোগকারীর এই সংখ্যা হ্রাস ২০০৫ সাল থেকে নতুন নিয়মে চালু হওয়া পেনশনের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে জানিয়েছে সেগুরো স্যোশ্যাল।
Advertisement
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দীর্ঘ সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে জানিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থা হলেও সেটা হবে ‘নিয়ন্ত্রিত’।
স্পেন থেকে অন্যান্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ এবং অন্যদেশ থেকে স্পেনে পর্যটক আসার ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর মধ্যে সময় নির্ধারণ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে স্পেনকে পর্যটনের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে অবশ্যই স্যানিটেশন নীতিমালার ভেতরে রেখে পর্যটকদের আসার অনুমতি দেবে সরকার। উল্লেখ্য, স্পেনের বাৎসরিক আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে পর্যটন খাত, যা করোনা মহামারির কারণে দেশটিকে পুরোপুরি পর্যটনশূন্য হয়ে গেছে।
এছাড়া যারা স্পেন থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে পর্যটক হিসেবে যেতে ইচ্ছুক তাদের ক্ষেত্রে ইতালি উন্মুক্ত করবে ৩ জুনের মধ্যে। ফ্রান্স, জার্মানি, সাইপ্রাস, গ্রিস, সুইডেন ১৫ জুন উন্মুক্ত করবে। স্পেনের শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষ আগামী সোমবার ধাপ-২ (লকডাউন ক্রমান্ময়ে শিথিল করার তৃতীয় ধাপ)এ উন্নীত হবে।
Advertisement
সামনের সপ্তাহ থেকে ক্যানটেবারিয়া, লা ঘোমেরা, লা গ্রাসিকো, এল ইয়েররো শহরগুলো ধাপ-৩ এ যাওয়ার জন্য আবেদন করবে। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা সামনের সপ্তাহও ধাপ-১ এ থাকতে হবে। এই দুই শহরে আক্রান্ত সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং পুনরায় সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার ধাপ-২ এ উন্নীত হবার অনুমোদন সামনের সপ্তাহে দেবে না। সে হিসেবে কাতালোনিয়ার রাজধানী ও ইউরোপের অন্যতম পর্যটন শহর বার্সেলোনা আগামী ৮ জুনের আগে ধাপ-২ এ উন্নীত করার প্রস্তাব সরকার নাকচ করে দিয়েছে। করোনা মহামারি সঙ্কট কাটিয়ে ওঠতে না পারায় বিশ্বখ্যাত গাড়ি কোম্পানি নিশান তাদের বার্সেলোনায় অবস্থিত ফ্যাক্টরি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এই অঞ্চলে কোম্পানির তিনটি ফ্যাক্টরিতে মোট ৩ হাজার কর্মী এই দুঃসময়ে চাকরি হারাবে। নিশান ইউরোপার প্রেসিডেন্ট গিয়ানলুকা ডে ফিচি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বার্সেলোনার জোনা ফ্রাঙ্কা, মোনকাডা-ই রাইজাক ও সান্ট আনদ্রেউ এই তিনটি শাখাই বন্ধ হয়ে যাবে। কাতালোনিয়ায় ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেছে ১১ জন। এ ছাড়া ২৭ মে মৃতের সংখ্যা ছিল ৮ জন, ২৬ মে মৃত্যুবরণ করেছে ১১ জন।
এই নিয়ে কাতালোনিয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চা আক্রান্ত প্রদেশ হিসেবে মোট মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ২২২ জনে উন্নীত হলো। প্রদেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ হাজার ২৮৮ জন। এমআরএম/এমকেএইচ