মফিজুর রহমান পলাশ
Advertisement
আজ যে গল্পটা পড়তে যাচ্ছেন সেটি শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলিং সিনেমার চিত্রনাট্য অথবা গা শিউরে ওঠা কিশোর উপন্যাসের কাহিনীর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় বরং নতুন ও প্রাণবন্ততার দিক থেকে বেশি সিনেমাটিক ও রীতিমতো দুর্ধর্ষ!
সময় : বুধবার সকাল ১টা। স্থান : সুন্দরবনের ভীতিসংকুল ও দুর্গম এলাকা।
বনরক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে নেহাতই মজা করতে গিয়েই সুন্দরবনের ‘প্রবেশ নিষেধ’ ও ‘বিপজ্জনক’ এলাকায় ঢুকে পড়ে একদল দুরন্ত কিশোর। কিন্তু তাদের সে মজা বিভীষিকা হয়ে উঠতে বেশি সময় নেয়নি। মনের খেয়ালে পথ হারিয়ে বনের গহীনে হারিয়ে যেতে থাকে উদ্দাম কিশোরের দল!
Advertisement
সংখ্যায় ওরা ছয়জন- জয়, সাইমুন, জুবায়ের, মাঈনুল, রহিম ও ইমরান। বয়স ১৬-১৭ বছরের বেশি হবে না। এদের দুজন ঢাকায় থাকে। বাকি চারজন গ্রামে। ঈদ উপলক্ষে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। যেই ভাবনা, সেই কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বুধবার সকালে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগরে বেড়াতে যায়।
ধানসাগর লাগোয়া এলাকায় বনরক্ষীদের অফিস। পাশেই ছোট্ট খাল। খালের ওপারে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের পুল বানানো হয়েছে। পুলটি সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এই সুন্দরবন পাহারা দেয়া বনরক্ষীরা এটির ওপর দিয়ে বনের গহীনে যান।
ছয় কিশোর লোকচক্ষুর অন্তরালে পুল পেরিয়ে খালের ওপারে চলে যায়। এরপর গল্প করতে করতে তারা সুন্দরবনের ভেতরে হাঁটতে থাকে। তাদের হাঁটার যেন শেষ নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কিশোররা ভুলেই যায় তাদের ঘরে ফিরতে হবে। ততক্ষণে সুন্দরবনের বিপদসংকুল গহীন অংশে ঢুকে পড়েছে উদ্দাম কিশোরের দলটি।
বিকেলে বহু দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসে আসরের আজানের শব্দ। তাদের সম্বিৎ ফেরে! এতক্ষণে তবে ঘরে ফেরার কথা মনে হলো? কিন্তু পৃথিবীর বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের কাদা-জলে বেড়ে ওঠা শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে অপার্থিব রহস্য লুকায়িত রয়েছে। সুন্দরী, কেওড়া, গরান ও হোগলার পরতে পরতে জীবন ও মৃত্যু দুটোই আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ডাকবে।
Advertisement
কিশোরের দল যে পথে ঢুকেছিল সুন্দরবনে, সে পথ তারা আর খুঁজে পেল না। এদিকে-ওদিকে এলোমেলো হাঁটাহাঁটি করে শেষে তারা চূড়ান্তভাবে পথ হারাল। বন থেকে বেরিয়ে আসার পরিবর্তে উল্টো বনের গহীনে যেতে লাগল ‘পথের মাঝে পথ হারানো’ দুরন্ত-উৎসুক কিশোরের দল। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। বেরুনোর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে এবার ওরা রীতিমতো ভীত, বিচলিত ও দিশেহারা।
পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ!
ছয় কিশোরের সাথে ছিল তিনটি মুঠোফোন। কিন্তু যে বিশাল বন তার বুক দিয়ে আইলা, সিডর, আম্ফানের মতো প্রলয়ঙ্করী ঝড় আটকে দিয়েছে বারংবার, সেই সুন্দরবনে ইন্টারনেটের তরঙ্গ বাধাগ্রস্ত হবে সেটাই স্বাভাবিক। মুঠোফোনে নেটওয়ার্ক আসে যায়, আসে যায়। একপর্যায়ে ওরা সমর্থ হলো- ফোন দিয়ে বাড়িতে জানাল তারা বনের গহীনে হারিয়ে গেছে!
দুর্বিনীত কৈশোর বাধ মানে না। হারিয়ে যাওয়াদের একজন বুদ্ধি করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে। নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে বনের মধ্যে পথ হারানো কিশোররা তাদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের কাছে অনুরোধ জানায়। পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে সঙ্গে সঙ্গে শরণখোলা থানার সাথে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এদিকে নৌ-পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। তারাও প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
খবর পাওয়া মাত্রই শুরু হয় পুলিশের উদ্ধার অভিযান। কিন্তু বিশাল এই সুন্দরবনে কারও অবস্থান জানা তো সহজ বিষয় নয়। খড়ের গাদায় সুই খোঁজা? নাহ! এটা তার চেয়েও কঠিন ও ভয়াবহও বটে! ওদিকে কিশোরদের সাথে থাকা দুটি ফোন চার্জের অভাবে ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। থাকল বাকি এক। সেটির মাধ্যমেই তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল পুলিশ।
পুলিশের অভয় পেয়ে কিশোরের দল কিছুটা ধাতস্থ হলো এবং অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো এ যাত্রায় হয়তো বেঁচে ফেরা সম্ভব হবে কিন্তু তাদের সেই আশার বাতিও ধপ করে নিভে যাওয়ার উপক্রম হলো যখন পুলিশের উদ্ধারকারী দলটি ওদের জানাল ওরা যে এলাকায় হারিয়ে গেছে সেই চাঁদপাই রেঞ্জের ওই অংশে বাঘের চলাচল আছে। সুতরাং হাঁটাহাঁটি করা চরম অনিরাপদ।
কিশোরদের বনের মধ্যে হাঁটাচলা না করে গাছে চড়ে বসার জন্য পরামর্শ দিলেন তাদের উদ্ধারে বনে আসা পুলিশের সদস্যরা। কিন্তু কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায়! অন্ধকার দুর্গম বন একাকার করে শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। সাথে গহীন অরণ্যের গুমোট অন্ধকার। এতে আরও ভড়কে গেল কিশোররা। এরমধ্যেই আবার তাদের ফোনের নেটওয়ার্কও চলে গেল!
এই রকম মুষলধারে বৃষ্টি নামলে আর সাথে থাকা মুঠোফোনগুলো সেবা দেয়া বন্ধ করে দিলে সমতলের যেকোনো অপরিচিত জায়গায়ও রীতিমতো ভয় পেতে পারত আমাদের এই কিশোর দলটি। ‘জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ’ কথাটা যে সুন্দরবনকে ঘিরে প্রচলিত হয়েছে কিশোরের দলটি হয়তো ততক্ষণে হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেছে!
ইতোমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমেছে পৃথিবীর অন্যতম দুর্ভেদ্য ও ভয়ংকর এই বনরাজিতে। বাচ্চাদের খুঁজে বের করতে পুলিশও মরিয়া হয়ে ঘুরছে জঙ্গলময়। পুলিশ সদস্যরা নির্ভিক। বন্দুকের ম্যাগাজিন ফুল লোড করে টর্চ হাতে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। মুঠোফোনে ওদের অবস্থান যতটা আঁচ করা গেছে সেটা লক্ষ্য করেই এগুচ্ছে উদ্ধারকারী দল। সতর্ক পুলিশ। যেকোনো মুহূর্তে তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে সুন্দরবনের বেরসিক রাজকীয় পাহারাদার! তবে কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয় বন্দুকধারীরাও। তারাও প্রস্তুত। হোক সে সুন্দরবনের অতন্দ্রপ্রহরী বা অন্যকিছু! যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বাচ্চাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর।
ওদিকে গহীন সুন্দরবনের ঘুটঘুটে অন্ধকারে পথ চলা কঠিন। পুলিশের লোকজন হারিয়ে যাওয়াদের মোবাইলে কলের পরে কল করে যাচ্ছেন কিন্তু সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। বহু চেষ্টায় পুলিশ তাদের সাথে পুনরায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন। কিন্তু পথঘাট না চেনা ও দিক বলতে অক্ষম অপরিপক্ব বেয়াড়া পর্যটকদের উদ্ধারে পুলিশ একটু ভিন্ন কৌশল বেছে নিলেন। সুন্দরবনের ওই অঞ্চলে একটা ছোট্ট মসজিদ ছিল। পুলিশের নির্দেশে মসজিদের লাউডস্পিকারে শব্দ করা হলে তা শুনতে পায় পথহারা বালকরা। ওদের কান উদ্দীপ্ত হয়, চোখ চিকচিক করে ওঠে।
কিন্তু সমস্যাটা হলো বনের ওই এলাকার পাশের লোকালয়ে দুই পাশে দুটি মসজিদ আছে। কাজেই কোন মাইকের শব্দ তারা শুনতে পেল, সেটি জানতে পারলে তাদের অবস্থানের ব্যাপারে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। এবার একপাশের মসজিদের মাইক দিয়ে তাদের ডাকা হলো। আর ফোনে জানতে চাওয়া হলো, আওয়াজ শোনা যায় কিনা? জবাব এলো, খুবই কম। এবার বনের অন্য পাশের মসজিদের মাইক দিয়ে ডাকা হলো। এবার মোবাইল ফোনে কিশোররা জানালো, তুলনামূলক স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছে তারা। এটার মাধ্যমে বনের মধ্যে তাদের অবস্থানটি কিছুটা আঁচ করে নিলেন পুলিশের উদ্ধারকারী দলটি। সুন্দরবনের ভেতরে দিনের আলোতে স্বাভাবিকভাবে ৩-৪ কিলোমিটার পর্যন্ত শব্দ শোনা যায়। তবে রাতের নিস্তব্ধতা পেরিয়ে শব্দ আরও গহীন থেকে শোনা যায়। তাই সুন্দরবনের ৪-৫ কিলোমিটার ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগুতে থাকে পুলিশ।
আগেই বলেছিলাম সুন্দরবনের ভেতর হাঁটা সহজ নয়। কেওড়ার শ্বাসমূলের সাথে লতাগুল্ম, ঝোঁপঝাড় আর নানান ধরনের কাঁটা। বনের অন্ধকারের সাথে সমানে চলছিল বৃষ্টিপাত। পিচ্ছিল পথে এক কণ্টকাকীর্ণ যাত্রা। কয়েক ঘণ্টা ধরে সেই পথ পাড়ি দিয়ে বনের আরও ভেতরে যেতে থাকলেন জেদী পুলিশের লোকজন। বাঘের ভয় এখন আর নেই, বাচ্চাদের উদ্ধার করে নিরাপদে বাড়িতে পাঠানোই একমাত্র চিন্তার বিষয়।
বনের গহীনে হাঁটতে হাঁটতে পুলিশের দলনেতা ফোনে ওই কিশোরদের বললেন, ‘আমরা হাঁক তুলব। যদি তোমরা শুনতে পাও তো তোমরাও হাঁক তুলবে যাতে আমরা বুঝতে পারি তোমরা আমাদের আশপাশেই আছ।’
যেই কথা সেই কাজ। পুলিশ বনের মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে হাঁক তুলল। কিন্তু ওই পাশ থেকে সাড়া নেই। ঘণ্টা খানেক পর ওপাশ থেকেই হাঁকের জবাব এলো। এ যেন নিকেশ কালো অন্ধকার শেষে সুড়ঙ্গের ওপাশে মৃদু আলো দেখার মতো বিস্ময়কর ও বহু কাঙ্ক্ষিত শব্দের অনুরণন। এবার পুলিশও বুঝতে পারলেন, উদ্ধারকারী দল আর পথহারানো কিশোরদের মাঝে সরলরেখা বরাবর দূরত্ব ক্রমশ কমতে শুরু করেছে এবং একসময় দূরত্ব শূন্য বিন্দুতে এসে ঠেকল। হারিয়ে যাওয়া কিশোরদের খুঁজে পাওয়া গেল অবশেষে। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ৩টা নির্দেশ করছে। প্রায় দশ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটল।
দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময় বনের মধ্যে আটকাপড়া ভীত, তটস্থ, ক্ষুধার্ত ও দিশেহারা কিশোরের দলটি ততক্ষণে ভারমুক্ত হলো পুলিশের কাঁধে। ওদের কপাল ভালো বেচারা পুলিশ চলে আসায় বাঘগুলো নরমাংসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলো! সুন্দরবনের বাঘ কতদিন মাংসের স্বাদ পায় না কে জানে!
প্রতিকূল পরিবেশে থেকে মুষড়ে পড়েছিল কিশোররা। পুলিশ ধরাধরি করে তাদের নিয়ে থানায় ফিরতে ফিরতে রাত পেরিয়ে ভোর। অনেকক্ষণ কিছু না খেতে পেরে আরও ক্লান্ত কিশোররা। থানায় এনে প্রাথমিক শুশ্রুষার পাশাপাশি খাবার দেয়া হলো ওদের। এরপর ‘নিরাপদে বাঘের মুখ থেকে প্রাণে ফিরে আসার’ স্বীকৃতি হিসেবে সকালে মিষ্টিমুখ করিয়ে কিশোরদের যার যার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হলো।
সন্তানদের ফিরে পেয়ে পরিবারের সদস্যদের চোখে আনন্দ অশ্রু। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য প্রাণভরে দোয়া করলেন তারা। জানালেন অশেষ কৃতজ্ঞতা। থানা থেকে বিদায়বেলা হারিয়ে যাওয়া দলের অন্যতম সদস্য জয় থমকে দাঁড়াল। পুলিশকে লক্ষ্য করে জয়ের কণ্ঠে ঝরে পড়ল কৃতজ্ঞতা।
‘বনের ভেতরে যখন হারিয়ে গিয়েছিলাম, তখন বারবার মনে হয়েছে এ জীবনে আর ফেরা হবে না। কিন্তু পুলিশের কারণে আমরা ছয়জন আবার নতুন জীবন পেলাম। আমি পড়াশোনা করে পুলিশ হতে চাই। বিপদে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
জয় লেখাপড়া শিখে পুলিশে আসুক। পুলিশ সদস্যরা যেমন ওর বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেও তেমনি একদিন মানুষের বিপদে বুক চিতিয়ে দাঁড়াক। ওর জন্য শুভকামনা রইল।
বিষয়টি নিয়ে মোড়লগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলাম ও শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদের সাথে আলাপ হয়। তারা জানান, বয়স কম হওয়ার কিশোরদের সাথে অত্যন্ত মানবিক আচরণ করেছে পুলিশ।
তারা বলেন, পুলিশ বিপদাপন্ন কিশোরদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সুন্দরবনের এই জায়গাটি দূরবর্তী হওয়ায় ও আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় উদ্ধার অভিযানে কিছুটা সময় লাগে। তবে শেষ পর্যন্ত ওদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পেরে খুশি অভিযানে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কিশোরদলও শেষ পর্যন্ত তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। পুলিশ সবাইকে সতর্ক করেছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতির বাইরে সুন্দরবন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকেন।
এভাবে একটা অভিযান সফলভাবে শেষ হলো। বাঘের বাড়ি থেকে ঘুরে এলেও বাঘ ওদের ছুঁতে পারেনি বরং বাঘের হাত থেকে উদ্ধার করে পুলিশই কোলে কাঁধে করে ওদের লোকালয়ে নিয়ে আসলেন, আদর করে খাওয়ালেন, মিষ্টিমুখ করালেন।
কিন্তু লোকে যে বলে ‘বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর পুলিশ ছুঁলে ৩৬ ঘা’ বিষয়টা কি আসলে?
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পাকস্থলীতে না গিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরল ছয় ছয়টা অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। বাঘ ঘুণাক্ষরেও টের পেল না অথচ পুলিশের সদস্যরা ঠিকই নিজেদের জীবন বাজি রেখে ওদের জীবন বাঁচাতে বীরের মতো এগিয়ে গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
এই যে অসীম সাহসে বুকবেঁধে ঝড়বৃষ্টির রাতে অন্ধকারে বাঘের শক্তিমত্তা ও হিংস্রতাকে থোড়াই কেয়ার করে সফল অভিযান করলেন পুলিশের সদস্যরা, এই যে অতুলনীয় বীরত্ব, অসীম সাহসিকতা- এ জন্যই কি তাহলে বলা হয় ‘বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা’?
উত্তর জানার অপেক্ষায় রইলাম।
এইচআর/বিএ/এমএস