মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর আগামীকাল রোববার (৩১ মে) থেকে দেশের শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু হচ্ছে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু করার সিদ্ধান্তে খুশি বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউস কর্মীরা।
Advertisement
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে রয়েছে। ঈদের আগে লেনদেন চালু না করায় অনেক বিনিয়োগকারীর ঈদের খুশি মাটি হয়েছে। এমনকী কোনো কোনো বিনিয়োগকারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অপরদিকে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মীরা বলছেন, শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে অনেক দিন ধরেই বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউজ লোকসানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকায় হাউসগুলোর লোকসানের মাত্রা আরও বেড়েছে। ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন বেশিরভাগ ব্রোকার হাউজের কর্মীরা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে শুরু হয় গত ৮ মার্চ। ওইদিন বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পায়। ফলে এর প্রভাবে ৯ মার্চ শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনে রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর দফায় দফায় দরপতন হতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়।
Advertisement
এরপরও পতন ঠেকানো না গেলে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মাধ্যমে শেয়ার বাজারের পতন কিছুটা হলেও থামানো যায়। তবে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন করার জোর দাবি জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (২৮ মে) কমিশন সভা করে বিএসইসি আবারো শেয়ারবাজারে লেনদেন করার অনুমতি দেয়। বিএসইসির অনুমতি পেয়ে রোববার থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। স্টক এক্সচেঞ্জের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন চালুর জন্য ঈদের আগেই আমরা দাবি জানিয়েছে। লেনদেন বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক বিনিয়োগকারী ভাইয়েরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ব্রোকারেজ হাউসে অনেকের টাকা আটকে রয়েছে। শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা খুশি। আমাদের দাবি মেনে নেয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বেলাল নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ছিল সব থেকে বড় ভুল। যেহেতু শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সুতরাং দরপতন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ নেই।
Advertisement
তিনি বলেন, দুই মাস পরে হলেও সংশ্লিষ্টদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আমার মতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা খুব কষ্টে রয়েছেন। আমরা কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে পারি না। এমনিতে ভাইরাসের আতঙ্ক, তার ওপর অর্থসংকট। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না আমাদের। শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু হওয়ায় শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও অর্থ যোগাড় করতে পারবেন। এটাই এখন আমাদের জন্য সবথেকে বড় সুসংবাদ।
লেনদেন চালুর বিষয়ে ব্র্যাক ইপিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, অবশেষে একটা ভালো সংবাদ শুনলাম। লেনদেন না হওয়ায় আমরা মারাত্মক মানসিক চাপে ভুগছিলাম। লেনদেন যাই হোক শেয়ারবাজার খুলছে এতেই আমরা খুশি।
শাকিল রিজভী স্টকের এক কর্মকর্তা বলেন, মালিক আমাদের বসে দুই মাস বেতন দিয়েছেন। এভাবে বসে বসে মালিকের পক্ষে কতদিন বেতন দেয়া সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে আবারও লেনদেন চালু হওয়ায় মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
পার্কওয়ে সিকিউরিটিজের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালের মহাধসের পর থেকেই বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউজ ভর্তুকি দিয়ে চলছে। মহামারি করোনাভাইরাস ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অবস্থা আরও নাজুক করে দিয়েছে। সামনে আমাদের জন্য কঠিন সময় আসছে। লেনদেন চালু হওয়ায় কিছুটা হলেও হাউজগুলোর আয়ের পথ খুলেছে। তারপরও সামনে যে কারো চাকরি চলে যেতে পারে।
এমএএস/এমএফ/এমএস