দেশজুড়ে

রাজনের বাড়িতে পুলিশের পাহারা

তিনমাস আগেও সিলেট শহরতলীর কান্দিগাঁও বাদেআলী গ্রামে শিশু রাজনের বাড়িতে নড়বড়ে একটি মাটির ঘর ছিল। ওই ঘরেই নিরাপদ ছিলেন রাজনরা। এখন প্রবাসী একটি সংগঠনের অর্থায়নে নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে আধাপাকা একটি ঘর। এরপরও এখন নিরাপদ নয় রাজনের পরিবার। কারণ রাজন হত্যা মামলার আসামিদের স্বজনদের হুমকির কারণে রাজনের পরিবারের নিরাপত্তায় রাতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।প্রভাবশালী ভাই আলী হায়দারের দাপটে কামরুল ও তার ভাইয়েরা ছিল হিংস্র। স্থানীয় গিয়াস মেম্বারের হাত ধরেই আলীরা পেয়েছিলেন এই অসীম ক্ষমতা। যে ক্ষমতার কারণেই সাপকে যেরকম পিটিয়ে মারা হয়, ঠিক সেরকমই শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করে এই খুনিচক্র। খুনের পর রাজনের লাশ গুম করারও চেষ্টা করে তারা।এমনকি তাদের ক্ষমতার হাত এতটাই শক্তিশালী যে, রাজনকে খুনের পরপরই মূলহোতা কামরুল দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে স্থানীয় অসাধু কয়েক পুলিশকেও তারা প্রায় ম্যানেজ করে ফেলেছিল।তবে, প্রকৃতির রহস্যময় বেড়াজালে খুনিদেরই মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও চিত্র রহস্য উন্মোচন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই নিষ্ঠুর খুনের ভিডিও। এই পৈচাশিক ও নিষ্টুর নির্যাতন বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়।দেশে-বিদেশে এঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। দাবি ওঠে খুনিদের গ্রেফতারের। পরে এলাকাবাসী ও খুনিদের কোনো কোনো পরিবারের সহায়তায় ধরাও পড়ে খুনিরা। শুধু মূলখুনি কামরুল ইসলাম পালিয়েছিলেন সৌদিতে। সেখানে বাঙালিরা তাকেও ধরে রিয়াদে পুলিশে সোপর্দ করেন।গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সব জটিলতা কাটিয়ে কামরুলকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কামরুল এখন খাঁচায় বন্দি। কিন্তু তাকে যারা বিদেশ পালাতে সহযোগিতা করেছিলেন, তারা অনেকেই আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এরা রাজনের বাবাকে হুমকি দিচ্ছেন মামলা তুলে নেয়ার জন্য। সে কারণেই প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে সকাল পর্যন্ত রাজনের বাড়িতে এই পুলিশ পাহারা।আদালত সূত্র জানায়, রাজন হত্যা (১৪) মামলার কারান্তরীণ আসামিদের উপস্থিতিতে ৩৬ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে আদালত কামরুলের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১১ জন সাক্ষীকে আবার জেরার সুযোগ দিয়েছেন। তবে এই মামলার রায় খুব দ্রুতই দেয়া হবে। কারণ মামলার কার্যক্রম চলছে অনেকটা বিরতিহীন।নিহত রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান ওরফে আলম জানান, কামরুলকে বিদেশ পালাতে সহযোগিতা করেছিল গিয়াস মেম্বারসহ আরো কয়েকজন। এ ছাড়া শুরু থেকেই ঘটনাটি আপোষে নেয়ার জন্য একটি চক্র তদবির চালায়। তাদের কথা না শুনায় তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। টুকেরবাজারের গিয়াস মেম্বার মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন।এ বিষয়ে জানতে টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গিয়াস উদ্দিনের মুঠোফোনে কল দিয়ে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন বলেন, ‘রাজন হত্যায় একাধিক আসামি। বর্তমানে দুইজন পলাতক থাকা ছাড়া অন্য সবাই কারাগারে। বিচারও শেষের দিকে। তাই নিজ উদ্যোগেই শুধু রাতের বেলা রাজনের পরিবারকে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ।’এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) রহমত উল­াহ বলেন, ‘রাজনের বাবাকে কেউ হুমকি দিলে তিনি থানায় জিডি করবেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাহারা দেয়া হচ্ছে।’উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।ছামির মাহমুদ/বিএ

Advertisement