ষাটোর্ধ্ব শামসুল আলম। দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তারের আগে রাজধানীর শাহবাগে শসা বিক্রি করে ছয় সদস্যের পরিবারের সংসার চালাতেন। দুমাস আগে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার যখন অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে নির্দেশনা জারি করে, তখন বেকার হয়ে পড়ায় সংসার কীভাবে চলবে তা ভেবে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন।
Advertisement
মধ্যবয়সী হারু মিয়া। করোনা সংক্রমণের আগে রিকশা চালাতেন। দুই মাস আগে যখন সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দুজনেরই যেন কপাল খুলেছে। আগের চেয়ে বেড়েছে আয়-রোজগার। তারা এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী।
আজ শুক্রবার (২৯ মে) দুপুরে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল সংলগ্ন পাইকারি ওষুধের মার্কেটের সামনের রাস্তায় এ দুজনের দেখা মেলে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক সামগ্রী, যেমন- মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, গগলস, ফেস শিল্ড, ডেটল, হেক্সিসল, পিপিই ইত্যাদি বিক্রি করছেন। এ সময় প্রচুর চাহিদা থাকায় বেচাকেনা ভালো হচ্ছে দুজনেরই।
শুধু শামসুল আলম কিংবা হারু মিয়াই নন, তাদের মতো হতদরিদ্র আরও অনেকের জীবিকার নতুন পথ দেখিয়েছে করোনা, বাড়িয়েছে আয়-রোজগার।
Advertisement
বাবুবাজার ব্রিজের নিচে থেকে শুরু করে মিটফোর্ড হাসপাতাল অভিমুখী রাস্তার পুরোটাজুড়েই করোনাভাইরাসের বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক সামগ্রী সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
ষাটোর্ধ্ব শামসুল আলম জাগোনিউজকে জানান, সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। সংগ্রাম করেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন। কখনো রাজধানীর শাহবাগে শিশু পার্কের সামনে ফুটপাতে পান-সিগারেটের দোকান নিয়ে, আবার কখনো শ্যামলীর শিশু পার্কের সামনে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছিন। সর্বশেষ শাহবাগে শসা বিক্রি করছিলেন।
করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একদিন পায়ে হেঁটে মিটফোর্ড এলাকায় এসে দেখেন বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক সামগ্রী পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে লোকজন। এমন পরিস্থিতিতে অল্প পুঁজি নিয়ে এসব সামগ্রী কিনে ফুটপাতে বেচাকেনা শুরু করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই কোথায় অল্প দামে কিনে একটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়, তা জেনে নেন। আর তাতে দেখছেন লাভের মুখ।
হারু মিয়া জানান, দুমাস আগে যখন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন চার সদস্যের পরিবারের খরচ কীভাবে মেটাবেন তা ভেবে পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। পরিচিত একজনের সহযোগিতায় মিটফোর্ডে এসে এসব প্রতিরোধমূলক সামগ্রী বিক্রি শুরু করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রচুর চাহিদা থাকায় আয়-রোজগার ভালোই হচ্ছে।
Advertisement
বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ করোনা থেকে বাঁচার জন্য মিটফোর্ড এলাকায় এসে সুরক্ষা সামগ্রী কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাড়া-মহল্লার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে এখানে সব ধরনের সামগ্রী পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
এমইউ/এইচএ/পিআর