নাটোরের সিংড়ায় অপরকল্পিতভাবে অবৈধ পুকুর খনন এবং বিলের খাল ভরাট হয়ে পড়ায় জলাবদ্ধতার কারণে ২০ গ্রামের কয়েকশ হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে। খেতের অর্ধেক জমির ধান দিয়েও মিলছে না শ্রমিক।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, সিংড়া উপজেলার সেরকোল, শ্রীরামপুর, কংশপুর, সোনাপুর, পমগ্রাম, পুঠিমারী, কুশাবাড়ি, খাগোরবারিয়া, নতুনপাড়া, বড়শাঐল, পাটশাঐল, হাজিপুর, শৈলমারি, ধুলাউরিসহ ২০টি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের কষ্টে অর্জিত বোরো ফসল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। অনেক খেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেও খেতের চিত্রটা ছিলো ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিল সবুজের সমারোহ। যা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষকরা।
সিংড়া পুঠিমারী গ্রামের কৃষক মো. মোক্তার আলী বলেন, বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো। ঈদের আগে ১২ জন লেবার নিয়ে পুরো জমির ধান কেটে ফেলি। কিছু ধান কেটে জমিতে রেখে দিই। দু’এক দিন রোদ পেলে একটু রস টানলে ঘরে তোলার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কাটা ধান পানিতে ডুবে যায়। পরে লেবার নিয়ে সেই ধান তুলতে গিয়ে দেখা যায় সেগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম। অনেক ধানে গাছ গজিয়েছে।
একই গ্রামের শ্রমিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যেখানে শ্রমিকের মূল্য ছিল জনপ্রতি ৫০০ টাকা। সেখানে এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে নিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে জমির ধান ডুবে যাওয়ায় কৃষক তার ধান ঘরে তুলতেও পারবে না, বিক্রি করাতো দূরের কথা।
Advertisement
কৃষক হোসেন জানান, তিনি ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ঝড়ো বাতাসে জমির পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। অনেক খেতের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। ক্ষতি যা হওয়ার হবে।
পমগ্রামের কৃষক রাশিদুল ইসলাম (রাশি) বলেন, একদিকে যেমন শ্রমিক সংকট। তার মধ্যে বাধ সেধেছে বৈশাখের বৈরি আবহাওয়া। অধিকাংশ কৃষকই ধান ঘরে তুলতে পারেননি। এক বিঘা জমির অর্ধেক ধান লেবারকে দিতে হচ্ছে।
যে ধান কেটে ঘরে তুলছেন সে ধানেও কাঁদা মিশে ধান ঝরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধানের রং নষ্ট হচ্ছে। এতে করে কৃষক ধানের দাম পাবে না। আবার গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত খড়ের সংকটও দেখা দেবে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সিংড়া উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪০ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
Advertisement
তিনি আরো বলেন, পুঠিমারী, শৈলমারী, কুশাবাড়ি ও সোনাপুর-পমগ্রাম এলাকায় ৫শ থেকে ৬ হেক্টর জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি বিল থেকে বের হওয়ার জায়গাগুলো বন্ধ করে অরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব পানি লক্ষ্মীতলার মরাগাঙ্গীনা এবং পুঠিমারীর গদাই নদীতে গড়াতে পারলে কৃষকদের এ দুর্ভোগ থাকবে না।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, সিংড়া উপজেলার ৯৮ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। যে দুই ভাগ ধান বাদ রয়েছে তা এই অঞ্চলেই। গত কয়েক বছর ধরেই জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আগামী জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় সমস্যাটি সমাধানের জন্য তিনি উপস্থাপন করবেন। যাতে আগামীতে কৃষকদের এ দুর্ভোগ লাঘব করা যায়।
রেজাউল করিম রেজা/এফএ/জেআইএম