দেশজুড়ে

চারদিকে এত পানি অথচ পান করা যায় না

আম্ফানে ভেসে গেছে সাতক্ষীরার উপকূল। তিন উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। চারদিকে পানি থৈ থৈ। কিন্তু খাওয়ার পানি নেই। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। উপকূলীয় এলাকার টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ভেসে গেছে মিঠা পানির পুকুরও। এসব এলাকার মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই।

Advertisement

সাতক্ষীরার উপকূলীয় গাবুরা ইউনিয়নের লেবুগুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাফিজা বেগম বলেন, পানিতে গোটা এলাকা ভেসে গেছে। রাস্তার উপর বসবাস করছি। এলাকার টিউবওয়েলগুলো পানির নিচে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে কিন্তু খাওয়ার পানি কোথাও নেই।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডে খাবার পানির সমস্যা রয়েছে। লেবুগুনিয়া এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করেছে গ্রামবাসী। বর্তমানে এলাকায় পানি ঢুকছে না। তবে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মধ্যে ১১টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে।

তিনি বলেন, গোটা এলাকা পানির নিচে থাকায় মানুষকে খাওয়া-দাওয়া, টয়লেট, যাতায়াতসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। খাবার পানির সংকট রয়েছে। এলাকায় দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

Advertisement

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, এলাকায় সুপেয় পানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়া ও ভাটায় জেগে ওটা টিউবওয়েল থেকে দূষিত পানি পান করছে এলাকার মানুষ। শুধু আমার এলাকার চিত্র এমন নয়। ইউনিয়নের বন্যতলা, কামালকাটি, ঝাপা, পশ্চিমপাতাখালি, পার্শেমারা, পদ্মপুকুরসহ ১০-১১টি গ্রামের চিত্র এমন।

পদ্মপুকুর গ্রামের আছিয়া বেগম জানান, খাবার পানির সমস্যা। চারদিক ভেসে গেছে। মাঝে মধ্যে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পানি এনে খেতে হয়। যেতে না পারলে পানিতে ডুবে যাওয়া টিউবয়েল থেকে নেয়া পানি পান করতে হয়।

আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারিভাবে খাবার পানি পেলেও দুর্গম এলাকায় সুপেয় পানি পাচ্ছেন না মানুষ। সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকায়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য।

জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রতিদিন সুপেয় খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নে নৌকায় করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

Advertisement

জেলার শ্যামনগর উপজেলার শত শত পরিবার এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেনি। বুড়িগোয়ালিনী ও দাতিনাখালী আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন এসব মানুষগুলো। ঝড়ে হারিয়েছেন সর্বস্ব। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়েছেন।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, ইউনিয়নের এখনও শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ রক্ষা করেছে গ্রামবাসী। বর্তমানে পানি প্রবেশ করছে না। তবে এলাকায় খাবার পানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া রান্না-বান্না বা গৃহস্থালির কাজের পানিও নেই। সরকারিভাবে বা বিভিন্নভাবে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে সেটি খুব কম।

বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের সুনন্দা দাস জানান, বৃষ্টি হলে সেই পানি হাড়ি-পাতিলে ধরে রাখছি। সেই পানিই খাচ্ছি। ফুরিয়ে গেলে পুকুর থেকে নেয়া লোনা পানিতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করছি।

অন্যদিকে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামবাসীর চিত্রও একই। এসব এলাকায়ও দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট।

আশাশুনি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাঁধ ভেঙে লোনা পানি প্রবেশ করায় সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সরকারিভাবে প্রতিদিন আশাশুনিতে ২৫ হাজার লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরশেদ আলী বলেন, আশাশুনি উপজেলায় তিনটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। সেখান থেকে মানুষদের চাহিদামতো পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনটি নির্ধারিত পয়েন্টে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলায় বুড়িগোয়ালিনী দাতিনাখলি এলাকায় একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সেট করা হয়েছে। সেখান থেকে দুর্গত এলাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভ্যানযোগে এক হাজার লিটার পানির ট্যাংকি নিয়েও গ্রামে গ্রামে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

এফএ/জেআইএম