এ মুহূর্তে নিজের আপনজনকে জীবনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করতেই ভয়ার্ত ফ্যাকাসে চাহনিতে উত্তর আসতে পারে, জানি না, কিংবা অপ্রত্যাশিত কান্না! আপনজনের কান্নাখেকো কষ্টের তীরগুলো বিঁধে আপনি বাকরুদ্ধ! নিজেকে সামলে যাপিত দিনের স্মৃতি হাতড়ে উত্তর-দক্ষিণ মেরু পাড়ি দিয়ে কোনো উত্তর না পেয়ে বিড় বিড় করে অব্যক্ত স্বরে বললেন, ‘জীবনের সংজ্ঞা এমনই, যেখানে যেমন’।
Advertisement
প্রস্তরযুগে মানুষ গাছের পাতা-ছাল পরে লজ্জা নিবারণ করেছে। কাঁচা মাংস খেয়েছে, পাথরে ঘষে আগুন জ্বেলেছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশে জীবনবন্দনায় ধাপে ধাপে মানুষ অনুভব করেছে জীবনের মানে ও সংজ্ঞা! দর্শন, সাহিত্য, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের জটিল আপেক্ষিকতা নিয়ে একচেটিয়া মতামত কেউই দিতে পারেনি। প্রাণের বিশুদ্ধ নির্যাসই জীবন। এক প্রাণ-এক জীবন! জীবনের বাঁক ভয়ানক খরস্রোতা! ভয়ানক ঘূর্ণিবাঁকে কে কখন কোথায় কীভাবে হারিয়ে যায়, তা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে।
সিরিয়া-আফ্রিকায় হাড্ডিসার শিশুদের কাছে জীবনের সংজ্ঞা হলো, ‘এখনও চোখে ঘুম নেই, ক্ষুধার রাজ্যে পাহারায় থাকি; কোথাও স্বপ্নে আছে ভাত?’ বেশ্যাদের প্রতিমুহূর্তে জীবনের সংজ্ঞা পাল্টায়; নতুন খদ্দের ওদের নতুন পৃথিবী উপহার দেয়। ওখানে কাঁদতে হয়, বাঁধতে হয়, নাইতে হয়, গাইতে হয়, জ্বলতে হয়, এমনকি মরতে হয়! ওদের জীবনের সংজ্ঞা বুঝি এমনই হয়! দিনের আলোতে বেশ্যা বলা চরম সৎ মানুষটি রাতের আঁধারে হয়ে যায় নিষিদ্ধ রুমের সিদ্ধ পুরুষ। নতুন বেশ্যাগমন না করলে ঘুম আসে না, মনটা হয়ে যায় চরমে চরম। ফ্লোর প্লে বোঝে না, অর্গাজম বোঝে না, স্ত্রীর কাছে কেতাদুরস্ত আনাড়িপনা করে রাতারাতি বনে যান, ‘তবুও আমি সতী’।
চরম ঘুষখোরের কাছে জীবন সংজ্ঞায়িত হয়, টাকার মাপকাঠিতে! চোরের চুরি, ভেজালের উদ্বাহু, মিথ্যুকের ফন্দিফিকির, সন্ত্রাসের বড় ভাই, চেয়ার প্রতিযোগিতা-উল্লম্ফন। সবই সংজ্ঞা, সংজ্ঞা-সংস্কৃতি বংশপরম্পরা! আজ করোনা অতিমারি যাপিত জীবনের সবার সংজ্ঞা বিশ্বময় এক কাতারে মেলানোর বার্তা দিয়ে গেছে। জীবনের সংজ্ঞা চরমে চরম হতে পারে না, হতে পারে পরম। জীবন বন্দনায় বেজে ওঠে প্রীতি ও সাম্যের সুর-লয়-তাল! আমাদের সবার জীবনটা অনেক অনেক মহিমান্বিত। এ জীবন হতে অনেক কিছুই সাম্য বন্দনায় পৃথিবীকে নন্দনতত্ত্বে নন্দনকানন বানিয়ে দেয়া যায়। দরকার একটু ইচ্ছাশক্তি।
Advertisement
সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাওয়া নিরন্ন মানুষের পরিবারে নেমে আসে বিপর্যয়! অভাবজনিত, ক্ষুধাতাড়িত জীবনে ভেঙে পড়ে মূল্যবোধ ও সম্পর্কের গভীর বুনোট। অভাব ও ক্ষুধার কাছে ধর্ম, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সব একাকার। রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে হেরে যায় কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাস, সাহিত্য ও বিজ্ঞান। হেরেছে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক সমৃদ্ধ সভ্যতা। প্রিয়তমা হয়েছে পতিতা, প্রিয় সন্তান পরিবার-পরিজন হয়েছে দেশান্তরী। মানুষ পঙ্গপালের মতো যা সামনে পেয়েছে তাই উদরস্ত করেছে। ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম প্রাচীন যুগ হতে এখনও নিরবধি চলছে, আগামীতেও চলবে।
ক্ষুধার সাহিত্যকে আর দীর্ঘতম করা যায় না। ক্ষুধা একটি স্বাভাবিক জৈবসংকেত। তাই জীবনের সংজ্ঞা ব্যাপ্তিকাল ক্ষুধা এক অনন্য স্থান দখল করে নিয়েছে, কারও কাছে মহান! কারও কাছে পেটে জ্বলন্ত ক্ষুধাসুর। আমার দৃষ্টিতে জীবনের সংজ্ঞা সময়ের চোরাবালিতে ‘যার কাছে যেমন’। আপেক্ষিক ঘরানা নিয়ে শুধু লুকোচুরি খেলা। এক লহমে সাধু শয়তান।
উত্তুঙ্গ মননে বদলে দিতে পারে আমাদের যাপিত এবং আগামী দিনের দৃষ্টিভঙ্গি। সমৃদ্ধ মনন-নন্দনের সমাহারে জাতি পরম দেশপ্রেম লালন করে দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে যায়। জাতীয় চেতনার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয়তাবাদ পূর্ণতা পায়। আমাদের দেশের শতভাগ সৎ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন জনকল্যাণমুখী ঘরানার সেবকগণ করোনাসংকট নিয়ে জনবান্ধব ঘরানাকেন্দ্রিক কাজ করে চলেছেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার জনাব শামসুন্নাহার পিপিএম অনন্য উচ্চতায় ঋজু ব্যক্তিত্বে অতিমারি করোনাসংকট মোকাবিলায় কাজ করে চলেছেন। যার নেতৃত্বে আইনি সেবার পাশাপাশি সামাজিক ও পারিবারিক সুরক্ষা, বন্ধন, সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতি, দেশের দক্ষ ও টেকসই মানবসম্পদ উন্নয়নে অহর্নিশ বহুমাত্রিক ঘরানার জনবান্ধব সেবা এখন সকল কমিউনিটির দোরগোড়ায়। এ বৈশ্বিক মহামারিতে তার দূরদর্শী নেতৃত্বে জনমুখী সেবায় যাপিত করে চলেছেন সকল কমিউনিটির লোকজনকে। নিজেই সবার ঘরে ঘরে গিয়ে সামাজিক সম্মানে সহায়তা করে চলেছেন।
Advertisement
একদিন সবার জীবনে রাঙ্গাপ্রভাত দোরগোড়ায় সহাস্যে উঁকি দেবে। চরম হতাশা করোনাসংকটের মেঘ কেটে যাবে। সবার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে জাতীয় বীরদের নাম। নিজের জীবনকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে প্রতিদিন জনকল্যাণই যার পাথেয়।
বিন্দু বিন্দু সিন্ধু জয়গান প্রজন্ম প্রভাতফেরি মিছিলে ধ্বনিত হবে এ মহীয়সীকে ঘিরে, নামটি ‘শামসুন্নাহার পিপিএম’।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিকপুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।মেইল-rajibkumarvandari800@gmail.com
এইচআর/বিএ/জেআইএম