সে যেন ছিল ‘হরিষে বিষাদ’- টিভির পর্দায় সবাই দেখেছেন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত দৃশ্য। যুব বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষে বাংলাদেশের যুবাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের জয়সূচক রান আসার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেসিংরুম থেকে বাংলাদেশের সব ক্রিকেটার আনন্দের আতিশয্যে জাতীয় পতাকা হাতে ঢুকে পড়েন মাঠে।
Advertisement
আর সেখানেই ভারতীয় যুবাদের সঙ্গে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় দুই দলের ক্রিকেটাররদের মাঝে। হঠাৎ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা যায় এক ভারতীয় ক্রিকেটারের হাতে।
সেটা দু দলের ধাক্কাধাক্কি, বিবাদের সময় ভারতীয় যুবারা ছিনিয়ে নিয়েছিল কি না? জটলার ভেতরে তা স্পষ্ট বোঝা যায়নি। টিভির ক্যামেরা সেখানে পরিষ্কার ধরা ছিল না। তাই লাল সবুজ পতাকা ভারতীয়দের হাতে যাওয়ার ঘটনাটি পরিষ্কার নয়। সেটা খানিক ধোয়াটেই রয়ে গেছে।
তবে যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে যে একটা উত্তেজক পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটেছে এবং খেলোয়াড়রা খানিক বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেটা টিভিতে সবাই দেখেছেন। খালি চোখে মনে হতে পারে ঐ উত্তেজনা ও উত্তেজক পরিস্থিতি বুঝি শুধু ফাইনাল শেষেই হয়েছে।
Advertisement
কিন্তু আসলে তা নয়। বাংলাদেশ যুব দলের অধিনায়ক আকবর আলী জানালেন, ফাইনালের পরতে পরতে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতাই ছিল না, মাঠে এক ধরনের উত্তেজনাও কাজ করছিল। বৃহস্পতিবার রাতে ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে কথা বলতে এসে এ কথার জানান দিলেন অধিনায়ক আকবর।
তিনি জানালেন, জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে দুই দলের খেলোয়াড়রা সুযোগ পেলেই স্লেজিংয়ে মেতে উঠেছিলেন। তবে আকবর স্বীকার করেন, বাংলাদেশের যুবারাও স্লেজিং করেছেন। কিন্তু ভারতীয়দের স্লেজিংয়ের মাত্রা ছিল অত্যধিক বেশি।
তবে এজন্য ভারতীয়দের দোষারোপ করতে নারাজ আকবর। তার কথা, ‘ফাইনালে শুধু ভারতীয়রাই নয়, আমরাও স্লেজিং করেছি। তবে ভারতীয়রা প্রচুর স্লেজিং করেছে। তবে আমরা ওদের দোষ দিচ্ছি না। কারণ, আমরাও স্লেজিং করেছি। তারাও করেছে। এটা আজকাল পার্ট অব গেম হয়ে গেছে।’
ভারতীয়রা কিভাবে বেশি স্লেজিং করেছে, তার বোঝাতে গিয়ে আকবর আলী বলেন, ‘আমাদের দু-একজন খেলোয়াড় স্লেজিং করেছে। আর ভারতের ৬-৭ জন অনবরত কথা বলেছে। সেটা একটু বেশি ছিল।’
Advertisement
অমন অনবরত স্লেজিংয়ের সময় কিভাবে নিজেকে সংযত রাখলেন? এমন প্রশ্নর জবাবে আকবর আলীর ব্যাখ্যা, ‘আমি আর ইমন (ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন) তখন উইকেটে। আমরা প্রতি ওভার শেষে পিচের মাঝখানে এসে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা সেরে নিতাম। বারবার বলতাম কিছুতেই রিয়্যাক্ট করা চলবে না। তারা বলে যাক, আমরা না শোনাার ভান করব। কিছুতেই নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে যাবে না। আমরা ঠিক করলাম ওরা যাই বলুক, জবাব না দিয়ে নিজেরা কথা বলব, হাসাহাসি করব, হেসে উড়িয়ে দেবো।’
একপর্যায়ে সঞ্চালক নোমান মোহাম্মদ জানতে চান ভারতীয়রা কী বলে স্লেজিং করছিল? এবার যেন লজ্জা পেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শুধু এটুকু বললেন, ‘আমার মনে হয় না তা এখানে বলার মত। এটা আসলে পাবিলক ফোরামে বলার মতো নয়।’
খেলা শেষে কী হয়েছিল? ভারতীয়রা কি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা কেড়ে নিয়েছিল? আকবর জানান, ‘আমি আসলে ঠিক ঐ জায়গায় ছিলাম না। অন্য জায়গায় জয়োৎসব করছিলাম। আমিও দেখলাম ৪-৫ সেকেন্ডের মধ্যে একটা হৈহুল্লোড় অবস্থা। পরে যেটা শুনলাম তা হলো আমাদের জয়ের উৎসবটা তারা খুব সহজভাবে নিতে পারেনি।’
ঐ ৪-৫ সেকেন্ডের ভেতরে কী হয়েছে? আকবরের উত্তর, ‘আমিও জানি না। পতাকা কেড়ে নিয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে এটা ঠিক দু পক্ষই আক্রমণাত্মক ছিল। তবে জাতীয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল কি না- আমি নিশ্চিত না। হয়তো ভিড়ের ভেতরে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে তাদের হাতে চলে যেতে পারে।’
এআরবি/এসএএস/এমএস