সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দোয়েল চত্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ আউটডোর অভিমুখী রাস্তা একদম ফাঁকা। আউটডোর থেকে ডানদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে চোখ পড়তেই বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছে। এসময় আনুমানিক ১০-১২ বছর বয়সের কয়েকজন কিশোরকে গায়ে গা ঘেঁষে পথ চলতে দেখা গেল। তাদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। কয়েক মাস বয়সী একটি শিশুকে কোলে নিয়ে ফুটপাতে বসে চা সিগারেট বিক্রি করছিলেন এক তরুণী। সেই তরুণী মায়ের মুখেও মাস্ক নেই। অদূরে মোটরসাইকেলে বসে আড্ডারত একজন তরুণের মুখে মাস্ক থাকলেও তাদের অর্ধেকেরও বেশি মাস্ক খুলে কথা বলছিলেন।
Advertisement
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সেসময় থাকা কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, তাদের অধিকাংশই পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে এসেছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে ঘোষিত ছুটি ও কড়াকড়িতে বাসায় বসে বসে ‘বোরড’ হয়ে যাওয়ায় একঘেঁয়েমি কাটাতে তারা এসেছেন এখানে। অনেকে এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, আবার অনেকে এসেছেন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দল বেঁধে।
দেশে হু হু করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বৃহস্পতিবারের (২৮ মে) সর্বশেষ হেলথ বুলেটিন অনুসারে দেশে যে ৪০ হাজারেরও মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজারেরও বেশি ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মৃত ৫৫৯ জনের মধ্যে ১৯৯ জনই ঢাকায় মারা গেছেন।
কিন্তু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘুরতে আসা লোকজনের চলাচল দেখে বিন্দুমাত্র বোঝার উপায় নেই রাজধানী ঢাকা সংক্রমণের এমন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে! শুধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয়, গত দু’দিন যাবত রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। তার সঙ্গে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে অযথা ঘোরাঘুরি।
Advertisement
ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেখানে ঘুরতে এসেছেন। আড্ডা-খোশগল্প করছেন। গড়াগড়ি-গলাগলি করে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের বুলেটিনে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মাস্ক পরা, কমপক্ষে তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও গণমাধ্যমে একই বিষয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। বলছেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোতে। প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লোভস পরার কথা বলছেন তারা।
কিন্তু ঢাকার রাস্তা ও ঘোরাঘুরির স্পটগুলো দেখলে যে কারও মনে হবে, এসব পরামর্শ তোয়াক্কা করছেন না বেশিরভাগ মানুষই। বিশেষ করে উঠতি বয়সীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে খামখেয়ালি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশি। ফলে করোনা ছড়াচ্ছে মারাত্মক হারে।
সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩১ মে থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু এবং দোকান-পাট খুলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন না তারা নিজেরা যেমন সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন, তেমনি ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন ঘরের বয়োবৃদ্ধ-শিশুসহ স্বজনদের। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। উদাসীন বা বেপরোয়া লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও।
Advertisement
এমইউ/এইচএ/এমকেএইচ