দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মাত্র ১৩ দিনে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন শ্যামপুর থানার সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত এসআই মামুন মিয়া। ১৫ মে থেকে ২৭ মে (১৩ দিন) রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে থাকার পর বুধবার বিকেলে ছাড়পত্র পেয়ে নারায়ণগঞ্জ নিজ বাড়ি ফেরেন তিনি।
Advertisement
শ্যামপুর থানা, ওয়ারী জোন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত এসআই মামুন মিয়া দায়িত্ব পালনের ৩ মাস ১৫ দিনের মাথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ৭ মে থেকে ১০৩+ জ্বর শুরু হয়। কিছুতেই জ্বর কমছিল না। এর সাথে সাথে কাঁশিটাও বাড়ে। তার একদিন পর থেকে প্রচণ্ড শরীর ব্যাথা। ১১ মে থেকে বুকের ব্যাথাটাও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ১২ তারিখ ভোর থেকে শ্বাস প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হওয়ায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মতো কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে টেস্ট করা হয় ১২ মে। ১৫ মে সকাল ১০টায় ফোনে রিপোর্ট জানানো হয় করোনা পজিটিভ।
এসআই মামুন বলেন, ‘তাৎক্ষণিক আমার শ্যামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মফিজুল আলমকে ফোন করে বিষয়টা জানাই। তিনি সমস্যার কথা শুনে আমাকে তার প্রতিটা কথায় মোটিভেট করার চেষ্টা করলেন। এতে অনেকটা সাহস পেলাম। এর কিছুক্ষণ পরে ওয়ারী জোনের এডিসি স্যার, ইখতেখাইরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে আমার থেকে যাবতীয় তথ্য জিজ্ঞাসা করলেন। সাথে সাথে আশ্বস্ত করলেন যে তিনি হাসপাতালে কিভাবে ভর্তি হতে হবে বা সামগ্রিক যা যা করতে হবে সব ব্যবস্থা করে দেবেন। এবং তিনি নিজেই সব ব্যবস্থা করে দিলেন। তাই ১৫ মে সকাল ১০ টায় ফোনে রিপোর্ট জানানোর পর ১১ টার মধ্যেই হাসপাতাল পৌঁছে ভর্তি হই। পরবর্তীতে টেস্ট করা হয় ২৪ মে, ২৭ মে দুপুর ২ টায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। অথাৎ ২৭ মে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। ভর্তি হয়ে দ্রুত সুস্থতার জন্য আমি স্যারকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার ঊর্ধ্বতন স্যারদের সমন্বিত সাহায্যে আমার মানসিক অবস্থা অনেকটা শক্ত ছিল।’
মামুনের ভাষ্যমতে, গরম পানির ভাপ নেয়া, গারগল করা। লেবুর শরবত, ফল খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাসহ নিয়ম-কানুন মেনে চলে দ্রুত করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এ কথাটা সঠিক না। দৃঢ় মনোবল, সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই করোনাকে জয় করা যায়। রুটিন মাফিক মেডিসিন, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, জিঙ্ক ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। রসুন, আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি মসলার চা, গরম পানি করোনাভাইরাসের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা ভূমিকা পালন করে।
Advertisement
হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস অন্যের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি বেশি। আক্রান্ত হলে নিজেকে আলাদাভাবে রাখতে হবে বিচ্ছিন্ন করে।
করোনার কারণে কী কী সমস্যা দেখা দিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল ছিল। কয়েক দিন কিছুই খেতে পারতাম না। দিনে দুইবার ডাক্তার এসে দেখে যেত। পরে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ছোটাছুটি করতে হয়, সেক্ষেত্রে কোথা থেকে বা কিভাবে আক্রন্ত হয়েছি সেটা বলা মুশকিল।
মামুন মিয়া আরো বলেন, প্রকৃতপক্ষে মানসিক শক্তিটাই পারে করোনাভাইরাসটাকে জয় করতে। আমার আশেপাশে যখনি যে পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছি আমি শুধু আল্লাহ পাকের নাম স্মরণ করেছি, তার কাছে সাহায্য চেয়েছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সকলের জন্য দোয়া করেছি।
এফএইচএস/এসএইচএস/এমকেএইচ
Advertisement