জাতীয়

কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ : মেয়র আতিকুল

চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসা পাঁচ রোগীর এমন মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।

Advertisement

বুধবার (২৭ মে) রাতে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার জন্য তৈরি অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচ করোনা রোগী মারা যান। আজ বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজখবর নিয়েছি। রোগীর স্বজন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিজে কথা বলেছি। পরিদর্শন করলাম। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। তাছাড়া অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার ডিসটিংগুইশার ও সিলিন্ডার যেগুলো পাওয়া গেছে তার অধিকাংশগুলোই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ।’

মেয়র বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডির ফরেনসিক টিম। তদন্তে কাজ করছে গুলশান থানা পুলিশ। ফায়ার সার্ভিস থেকে আগুনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’

Advertisement

মেয়র আতিকুল আরও বলেন, ‘মানুষ হাসপাতালে আসে অসুস্থতা নিয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য কিন্তু এখানে যেভাবে আগুন লেগে পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হলো, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর দায় কোনোভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। তদন্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার কামরুল আহসান জাগো নিউজকে জানান, ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে তাঁবু গেড়ে স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবরে বুধবার (২৭ মে) রাত ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সেখানে পাঠানো হয়। রাত ১০টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, এসির বিস্ফোরণের কারণেই আগুন লেগেছে। আগুনে পুরো আইসোলেশন ইউনিটি পুড়ে গেছে যদিও মূল ভবন অক্ষত রয়েছে।

আগুনের খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সার্বিক খোঁজখবর নেয়ার পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন,অগ্নিকাণ্ডের সময় এক রোগীর স্বজন গেটে দাঁড়ানো ছিলেন। তিনি ৯টা ৪৮ মিনিটে আগুন দেখে ৯৯৯-এ ফোন করেন। আমরা তার ফোন চেক করেছি। এর ফলে ধরে নিতে পারি অগ্নিকাণ্ডের সূচনা ৯টা ৪৮ মিনিটে। পরবর্তীতে ভাটারা থানার মাধ্যমে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত মেসেজ পাঠাই। তবে ফায়ার সার্ভিস আসা পর্যন্ত সময়ে হঠাৎ করেই আগুন বড় পর্যায়ে চলে যায়। এর ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে তিনি বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা এসির স্পার্কিং থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া, ওই তাঁবুর প্রায় সকল দ্রব্যাদি অনেক বেশি দাহ্য। সেখানে অনেক ধরনের স্যানিটাইজেশন উপাদান ছিল, যা খুবই দাহ্য পদার্থ। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প সময়ে আগুন এখানে খুব বড় রূপ নেয় এবং পাঁচজন নিরীহ রোগী মৃত্যুবরণ করেন।’

নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন করোনা পজিটিভ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে তিনজন করোনা পজেটিভ এবং দুইজন নেগেটিভ বলে চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন মহিলা। তাদের তিনজনের বয়স ৭০-এর ওপরে, একজনের বয়স ৪৫ এবং আরেকজনের বয়স ৫০।’

‘যেহেতু দুজনের করোনা নেগেটিভ ছিল, তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। বাকি তিনজনের মরদেহ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ধর্মীয় বিধান মেনে দাফন বা সৎকার করা হবে’-যোগ করেন (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

গুলশান বিভাগের ডিসি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। আমরা ফায়ার সার্ভিস ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেব। কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল কি-না বা অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা ছিল কি-না খতিয়ে দেখা হবে। সে অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জেইউ/এসআর/জেআইএম