জাতীয়

শুধু করোনা-ঘূর্ণিঝড় নয়, একদিনও আমাদের এলাকায় আসেননি এমপি

কখনও মাথায় মাটির ঝুড়ি আবার কখনও চাল মুরগি কিনে অসহায় মানুষের বাড়িতে হাজির উপকূলীয় এলাকা সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার। কখনও শ্রমিকদের সঙ্গে কোদাল হাতে মাটি কেটে ফেসবুকে ভাইরাল। এসব কাজে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

Advertisement

তবে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দেখা যায়নি এই এমপিকে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ উপকূলীয় বাসিন্দাদের। তাদের অভিমত, তিনি শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ; বাস্তবে মানবসেবায় নেই।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ৪৩ নম্বর পাতাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের সার্বিক সহযোগিতার দায়িত্বপালন করেছেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আগে পাতাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০০ গ্রামবাসী আশ্রয় নেন। পাশের ফাজিল মাদরাসাতে ছিল দুই শতাধিক মানুষ। আমি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। একই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষকে সহায়তা করেছি। আমার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকরাও ছিলেন। তারাও আমার সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করেছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দু’একবার এসে দেখে গেছেন। আশ্রিতদের খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন চেয়ারম্যান। তবে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের খোঁজখবর নেননি আমাদের এমপি জগলুল হায়দার।

গাবুরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম খলিসাবুনিয়া এলাকার মাছের ঘের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। আম্ফানে তার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, ভেসে গেছে মাছের ঘের।

তিনি বলেন, এই মহাদুর্যোগের সময় এমপি জগলুল হায়দারকে কাছে পাইনি আমরা। দুইবার এমপি হয়েছেন তিনি। তবে এমপি হওয়ার পর একদিনও আমাদের এলাকায় আসেননি তিনি। শুধু আমার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নয়। এলাকার সব মানুষের ঘরবাড়ি ও মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ চেয়ারম্যান-মেম্বার-এমপি কাউকে কাছে পেলাম না আমরা।

গাবুরা ইউনিয়নের গাইনবাড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ১৫-২০ হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে গাবুরা ইউনিয়নের উপকূলীয় বাঁধ সংস্কার করেছেন। কিন্তু এমপি এলাকায় আসেন না। জনগণের খোঁজখবর নেন না।

Advertisement

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর আমার ইউনিয়নের অবস্থার উন্নতি হয়নি। সবকিছু ভেসে গেছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার করেছেন। জোয়ার এসে সেটিও নিয়ে গেছে। এমপি এসে দেখে গেছেন।

উপকূলীয় গাবুরা ইউনিয়নের লেবুগুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাফিজা বেগম বলেন, আমরা বাঁধ চাই, ত্রাণ চাই না। এমপি একদিনও এলাকায় আসেননি। এসব লোককে ভোট দিয়ে লাভ নেই। ভোট দিয়ে আমাদের কি হবে? কোনো কাজে আসে না এমপি।

একই গ্রামের বাসিন্দা করিমন বেগম। বর্তমানে লেবুগুনিয়া এলাকায় একটি উঁচু রাস্তার ওপর বসবাস করছেন তিনি। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে গেছে গোটা এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি।

করিমন বেগম বলেন, করোনা গেল, ঘূর্ণিঝড় গেল। এতকিছুর পরও এমপির দেখা নেই। বছর বছর নদী ভাঙে, কেউ দেখে না। রাস্তার ওপর থাকি। বাথরুমের সমস্যা। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা। কেউ দেখে না এসব কষ্ট। আমরা খুব কষ্টে আছি। খাবার পানিও নেই আমাদের।

শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা গ্রামের বাসিন্দা আকবার হোসেন বলেন, আমরা জানি না এমপি কেন এলাকায় আসেন না। ওনার কি শুধু ভোটের দরকার। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ালেন না। পথ চেয়ে বসে আছি; তারা কখন আসবেন। আমাদের সমস্যা কবে সমাধান করবেন তারা?

একই এলাকার বাসিন্দা ফজিলা বেগম বলেন, করোনা এবং ঘূর্ণিঝড়ের পর দুর্দিনে পড়ে আছি আমরা। রাস্তার ওপর বাস করছি এখন। কেউ আমাদের খবর নেয় না।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ.ন.ম আবুজর গিফারী বলেন, এমপি (জগলুল হায়দার) ফোনে সবসময় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি এলাকার খোঁজখবর রাখছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে পূর্বপ্রস্তুতির সব কাজ করেছি। ডিসিকে নিয়ে নীলডুমুর এলাকায় রাতে মিটিং করেছি। ৫-৬টি ইউনিয়নের সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করেছি। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে অসুস্থতার কারণে খুব বেশি কাজ করতে পারিনি। তবে মোবাইলে সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজখবর রাখছি।

গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ আপনি সেখানে যাননি, তাদের খোঁজখবর নেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে এমপি এসএম জগলুল হায়দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে আমি অসুস্থতার কারণে সেখানে যেতে পারিনি। গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকায় যাওয়া হয়নি আমার। তবে সেখানে ফোনে যোগাযোগ রেখেছি।

এএম/এমকেএইচ