সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুরের মৃত্যুতে দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার মৃত্যুতে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা শোকাহত।
Advertisement
নিলুফার মঞ্জুরের স্বজন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ বাসার জানান, একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। একজন উদ্যমী, বিনয়ী ও চিন্তাশীল হিসেবে তিনি আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। দেশে গুণগত মানসম্পন্ন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়ার তাগিদ তিনি গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর (বর্তমানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ও মেয়ে মুনিজে মঞ্জুরের (বর্তমানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের পরিচালক) ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা থেকে নিজের হাতেই গড়ে তুলেন অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সানবিমস স্কুল।
জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের ১৫ জানুয়ারি নিজ বাড়ির বাইরে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী (এর মধ্যে দুজন তার নিজের সন্তান) নিয়ে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিলেন নিলুফার মঞ্জুর, বর্তমানে সেটি বিশাল আকারে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ৪৬ বছর তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। শুধু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনেই তিনি সীমাবদ্ধ থাকেননি, শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়িয়ে দিতেন মায়ের মমতা।
আহমেদ বাসার বলেন, নিলুফার মঞ্জুর সবার সঙ্গে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতেন। এমনকি সবার নাম পরিচয় মনে রাখার চেষ্টা করতেন। শিক্ষার্থীরা তাকে অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাস দিতো। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে ও এটিকে এগিয়ে নিতে তার স্বামী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর (অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) উৎসাহ তাকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিলেন।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানকে তিনি পরিবারের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলেন। ফলে সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। যা প্রতিষ্ঠানটির সফলতার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে। তিনি নিয়মিত সবার খোঁজ-খবর রাখতেন। ফলে সবার কাছে তিনি আপনজন হয়ে উঠেছিলেন।
সানবিমস স্কুলের সহকর্মীরা জানান, অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর ছিলেন নানা গুণে গুণান্বিত তার আন্তরিকতা ও কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা। আসলে যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতার জন্যই এ গুণগুলো অপরিহার্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার বৈপ্লবিক স্বপ্ন নিয়ে যে বীজ তিনি রোপণ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা বহুমুখী সম্ভাবনার এক অনন্য মহীরূহ হয়ে উঠেছিল মূলত তারই নিরলস পরিশ্রম ও উদ্যমী কর্মকাণ্ডে। পাশাপাশি অন্যদেরও এটি অনুপ্রাণিত করেছিল। আজ দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের যে জয়জয়কার তার একজন সফল রূপকার নিলুফার মঞ্জুর।
নিলুফার মঞ্জুরের সহকর্মীরা বলেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকে তিনি ব্যবসা হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন সেবা হিসেবে। শিক্ষার্থীদের তিনি মানবিক হওয়ার শিক্ষা ও পরামর্শ দিতেন, শিক্ষা দিতেন একজন বিশ্ব নাগরিক হওয়ার। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকেও শিক্ষার্থীরা তাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করতো। এটি ছিল তার জন্য এক অন্তহীন আনন্দের বিষয়।
নারী শিক্ষার বিষয়টিকেও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন উল্লেখ করে তার প্রতিষ্ঠানের একাধিক নারী শিক্ষক বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে নারী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নিলুফার মঞ্জুরের মৃত্যুতে দেশ একজন শিক্ষাযোদ্ধাকে হারিয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য তিনি দেশের মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ মহীয়সী শিক্ষাযোদ্ধাকে আমাদের অন্তর থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ সালাম নিবেদন করি।
Advertisement
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২৬ মে) ভোরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুরের মৃত্যু হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত ড. মফিজ আলী চৌধুরীর মেয়ে নিলুফার মঞ্জুর দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী।
এমএইচএম/এমএসএইচ/এমএস